যুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসা এই ইউক্রেনীয় সাঁতারু কিভাবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হলেন?

যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের এক তরুণ সাঁতারু, যিনি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করেছেন। ভ্লাদিস্লাভ বুখভ নামের এই ২১ বছর বয়সী তরুণ, যিনি রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে নিজের শহর ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন, সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন।

২০১৪ সালে, যখন বুখভের বয়স ছিল মাত্র ১১ বছর, তখন রাশিয়ার সেনারা তার শহর ডনেটস্ক দখল করে নেয়। জীবন বাঁচাতে পরিবারসহ কিয়েভে পালিয়ে আসেন তিনি। যুদ্ধের বিভীষিকা থেকে বাঁচতে পারলেও, ইউক্রেনের এই তরুণ ক্রীড়াবিদের জীবন সবসময় উদ্বেগের মধ্যে কেটেছে।

সম্প্রতি কাতার এর দোহা-তে অনুষ্ঠিত বিশ্ব অ্যাকোয়াটিক চ্যাম্পিয়নশিপে ৫০ মিটার ফ্রিস্টাইল সাঁতারে স্বর্ণপদক জিতেছেন বুখভ। তার এই জয় ছিল সামান্য, ০.০১ সেকেন্ডের ব্যবধানে। যা সত্যিই অবিশ্বাস্য!

আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে বুখভের উত্থান বেশ চমকপ্রদ। যদিও সাত বছর বয়স থেকে সাঁতার শুরু করেছিলেন, তবে ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নেননি। শুরুতে আধুনিক পেন্টাথলনের প্রতি আগ্রহ ছিল তার, সাঁতার ছিল সেই খেলার একটি অংশ।

কিন্তু ধীরে ধীরে সাঁতারে ভালো করতে শুরু করলে, তার বাবা-মা তাকে একজন ভালো কোচের কাছে নিয়ে যান।

যুদ্ধ তার প্রশিক্ষণ এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। কিয়েভে প্রায়ই বিমান হামলার সাইরেন বাজতে থাকে, যা তার অনুশীলনকে ব্যাহত করে। প্রায়ই তাকে এবং তার সতীর্থদের অনুশীলন বন্ধ করে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে হয়েছে।

ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কারণে অনেকের মতো তিনিও মৃত্যুর আশঙ্কায় দিন কাটান।

যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশের প্রতিনিধিত্ব করা যে কতটা কঠিন, তা বুখভ ভালো করেই জানেন। তিনি বলেন, দেশের জন্য খেলোয়াড় হিসেবে তিনি গর্বিত। দেশের হয়ে আরও ভালো করার জন্য তিনি অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

তিনি মনে করেন, তার ভালো ফল ইউক্রেনের মানুষকে শান্তি এবং গর্ব এনে দেবে।

আসন্ন ২০২৫ বিশ্ব অ্যাকোয়াটিক চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য তিনি এখন সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করছেন। ইউক্রেনের আকাশপথ বন্ধ থাকার কারণে, তাকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে।

প্রথমে ট্রেনের মাধ্যমে পোল্যান্ড সীমান্তে, সেখান থেকে ওয়ারশ এবং সবশেষে বিমানে সিঙ্গাপুর।

বুখভের এই গল্প শুধু একজন ক্রীড়াবিদের সাফল্যের গল্প নয়, এটি সাহস, আত্মত্যাগ এবং দেশের প্রতি ভালোবাসার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। প্রতিকূলতা সত্ত্বেও, তিনি প্রমাণ করেছেন, ইচ্ছা থাকলে মানুষ তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *