স্বপ্নের উড়ান: এক সময়ের নারী ফুটবলের পরাক্রমশালী দল, আজ কোথায়?

এক সময়ের ইউরোপ সেরা, সুইডেনের উমেয়া আইকে (Umeå IK) এখন দ্বিতীয় বিভাগে ধুঁকছে। মেয়েদের ফুটবলে ইউরোপের প্রভাবশালী ক্লাবগুলোর উত্থানের ফলে এমন পরিণতি, যেখানে অর্থের ঝনঝনানিই সব।

ব্রাজিলের তারকা ফুটবলার মার্তার (Marta) এক সময়ের ক্লাবটির এমন দুর্দশা ক্রীড়ামোদী দর্শকদের হতাশ করবে।

উমেয়ার সোনালী অতীত: উমেয়া আইকে ছিল সুইডেনের একটি ছোট শহর থেকে উঠে আসা নারী ফুটবল দল, যারা একসময় ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পরেছিল।

মাঠের খেলায় তাদের সাফল্যের সাক্ষী হিসেবে এখনো ক্লাবের অফিসে সাজানো রয়েছে অসংখ্য ট্রফি ও স্মারক। একসময় এই দলের খেলোয়াড় ছিলেন মার্তা।

তার ৬০ নম্বর জার্সিটি এখনো সেখানে সম্মানের সঙ্গে রাখা আছে। এছাড়াও, আছে ২০০৩ সালের ইউয়েফা (UEFA) উইমেন্স কাপের (চ্যাম্পিয়ন্স লিগের পূর্বসূরি) ট্রফি।

এই ক্লাবটি টানা দু’বার ইউরোপ সেরা হয়েছিল, যা তাদের সাফল্যের প্রমাণ।

বদলে যাওয়া দৃশ্যপট: বর্তমানে ইউরোপীয় নারী ফুটবলে বড় পরিবর্তন এসেছে। দর্শক সংখ্যা ও টেলিভিশনে খেলা দেখার হার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদ, চেলসির মতো বড় ক্লাবগুলো এই খেলায় বিনিয়োগ করছে।

তাদের আর্থিক সামর্থ্যের কাছে উমেয়ার মতো দলগুলো টিকতে পারছে না। উমেয়ার বর্তমান কোচ এডভিন এরফানিয়ান মনে করেন, এখন আর শীর্ষ পর্যায়ে ফেরার সম্ভাবনা নেই।

তবে তিনি একে খারাপ চোখে দেখছেন না। তার মতে, নারী ফুটবলের মান অনেক বেড়েছে।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের চিত্র: নারী চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের দিকে তাকালে এই পরিবর্তনটা স্পষ্ট হয়।

কয়েক বছর আগেও যেখানে বেলারুশ, রাশিয়া, নরওয়ে, জার্মানির মতো দেশের দলগুলো খেলত, সেখানে এখন খেলছে রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনার মতো শক্তিশালী ক্লাবগুলো।

আর্থিক দিক থেকেও এসেছে বিশাল পরিবর্তন। বার্সেলোনার মতো ক্লাব যেখানে গত মৌসুমে প্রায় ১৯.৫ মিলিয়ন ইউরো আয় করেছে, সেখানে উমেয়ার আয় মাত্র ৮ লক্ষ ডলার।

নতুন বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া: উমেয়া শহরটি আর্কটিক সার্কেলের কাছে অবস্থিত। এখানকার শীত দীর্ঘ এবং তীব্র।

এখানকার আবহাওয়ার মতোই কঠিন হয়ে পড়েছে ক্লাবটির পথচলা। খেলোয়াড় এবং কর্মকর্তাদের মধ্যে এখন টিকে থাকার লড়াই।

ক্লাবের কর্মকর্তারা এখন সুইডেনের শীর্ষ বিভাগে ফেরা এবং একটি শক্তিশালী যুব দল তৈরির দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন। তাদের লক্ষ্য হলো, উত্তর সুইডেনের সেরা খেলোয়াড়দের সুযোগ দেওয়া।

আর্থিক চ্যালেঞ্জ: উমেয়ার সাবেক খেলোয়াড় ও বর্তমানে ধারাভাষ্যকার ইয়োহানা ফ্রিস্ক বলেন, মার্তার সময়ে দলটি ছিল অপ্রতিরোধ্য।

ক্লাবের তৎকালীন ক্রীড়া পরিচালক জর্গেন ক্রোভিন মনে করেন, ক্লাবটি বিদেশি খেলোয়াড় কেনার জন্য স্থানীয় এবং জাতীয় ব্যবসার কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল।

কিন্তু এখন স্পন্সরদের অভাবে ক্লাবটি আর্থিক সংকটে পড়েছে। মার্তা ক্লাব ছাড়ার পর তারা আর কোনো বড় শিরোপা জিততে পারেনি।

বড় ক্লাবগুলোর উত্থান: ইউরোপের প্রভাবশালী ক্লাবগুলো নারী ফুটবলকে গুরুত্ব দিতে শুরু করে।

প্যারিস সেন্ট জার্মেই, বার্সেলোনা, বায়ার্ন মিউনিখের মতো দলগুলো দ্রুত সাফল্য পেতে থাকে। তাদের পেছনে ছিল বিশাল বিনিয়োগ।

রিয়াল মাদ্রিদের নারী দল গঠিত হয় ২০২০ সালে। বর্তমানে নারী ফুটবলে ভালো করতে হলে হয় কোনো সফল পুরুষ দলের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে, না হয় প্রচুর অর্থের মালিক হতে হবে।

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা: উমেয়ার কর্মকর্তারা মনে করেন, তাদের পক্ষে এখন পুরুষ দলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই।

জার্মানিতেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। তাই, নারী ফুটবল ক্লাবগুলোর জন্য টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *