বিশ্বকে বাঁচাতে নয়া কৌশল! জলবায়ু পরিবর্তনে জাতিসংঘ প্রধানের চাঞ্চল্যকর ঘোষণা!

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাজারের শক্তিকে কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা ত্যাগ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে ঝুঁকতে হবে বিশ্বকে, অন্যথায় বিপর্যয় অনিবার্য।

সম্প্রতি এসোসিয়েটেড প্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গুতেরেস এই কথা বলেন।

গুতেরেসের মতে, জলবায়ু পরিবর্তন এখন আর কোনো দূরের বিষয় নয়, বরং এটি একটি বাস্তব সংকট। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্ব উষ্ণায়ন ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের সীমা অতিক্রম করার ঝুঁকিতে রয়েছে, যা প্যারিস জলবায়ু চুক্তির মূল লক্ষ্য ছিল।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, ২০২৩ সালেই এই তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গিয়েছিল। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রের উচ্চতা বাড়ছে, হিমবাহগুলো গলছে এবং ঘন ঘন দেখা দিচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ও তীব্র গরম।

জাতিসংঘ মহাসচিব বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন, জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ করা মানেই অর্থের অপচয় করা। কারণ, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং প্রযুক্তির উন্নতির ফলে সৌর ও বায়ু বিদ্যুতের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে।

ফলে, যারা এখনো কয়লা, তেল ও গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল, তাদের ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

গুতেরেসের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের এই সংকট মোকাবিলায় রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। উন্নত দেশগুলোর সরকারগুলোকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে এবং কার্বন নিঃসরণ কমাতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।

যদিও তিনি স্বীকার করেছেন যে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন একটি বড় বাধা ছিল, তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক রাজ্য ও শহর নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে ঝুঁকছে।

গুতেরেস জলবায়ু পরিবর্তনকে শুধু পরিবেশগত সমস্যা হিসেবে দেখেন না, বরং এটিকে দারিদ্র্য, সন্ত্রাসবাদ এবং বিশ্বব্যাপী অস্থিরতার সঙ্গে সম্পর্কিত একটি বিষয় হিসেবেও মনে করেন। তিনি উদাহরণস্বরূপ সাহেল অঞ্চলের কথা উল্লেখ করেন, যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মানুষ আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে।

গুতেরেস বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট সংকটগুলো মানুষকে আরও খারাপ পরিস্থিতিতে ফেলছে।

এই মুহূর্তে গুতেরেস গাজা, ইউক্রেন এবং সুদানের সংকটের কথা উল্লেখ করে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন পুরো পৃথিবীর জন্য একটি অস্তিত্বের সংকট। তিনি মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করতে না পারলে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দারিদ্র্য আরও বাড়বে, যা বিভিন্ন ধরনের সংঘাতের জন্ম দেবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের মতো নিচু উপকূলীয় দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো এখানকার মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।

তাই, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশের সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি।

জাতিসংঘ মহাসচিবের এই আহ্বান বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সরকার ও জনগণকে একযোগে কাজ করতে হবে।

নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি, কার্বন নিঃসরণ কমানো এবং পরিবেশ সুরক্ষায় সচেতনতা বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *