জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সকল দেশের প্রতি পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে। নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (International Court of Justice – ICJ) বুধবার এক যুগান্তকারী পরামর্শমূলক রায় দিয়েছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
আদালতের ১৫ জন বিচারক এই রায়ে একমত হয়েছেন।
আদালতের প্রেসিডেন্ট ইউজি ইওয়াসাওয়া এই রায়কে “গ্রহের আকারের একটি অস্তিত্বের সংকট” হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যা পৃথিবীর সকল জীবের স্বাস্থ্য এবং আমাদের গ্রহের জন্য হুমকিস্বরূপ।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ২০২৩ সালে আদালতের কাছে জানতে চেয়েছিল, জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় দেশগুলোর আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে কী কী বাধ্যবাধকতা রয়েছে এবং জলবায়ু ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হলে সরকারগুলোর কী ধরনের আইনি পরিণতি হতে পারে।
আদালত সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছে যে, একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ মানুষের মৌলিক অধিকার। এর মানে হলো, প্রতিটি দেশেরই একটি বাসযোগ্য পৃথিবী নিশ্চিত করার দায়িত্ব রয়েছে, শুধু জলবায়ু চুক্তি স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর মধ্যেই এই সীমাবদ্ধতা নেই।
কোনো দেশ যদি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়, তাহলে তা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য হবে। এই রায়ের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার দেশগুলোর জন্য একটি আশার আলো।
আদালত আরও উল্লেখ করেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুচ্যুত হওয়া মানুষের প্রতি দেশগুলোর মানবিক আচরণ করা উচিত। জলবায়ু উদ্বাস্তু বা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যারা তাদের ঘরবাড়ি হারাতে বাধ্য হচ্ছে, তাদের আশ্রয় দিতে অস্বীকার করা যাবে না।
এমনকি যদি কোনো দেশ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে ডুবে যায়, তাহলেও সেই দেশের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হবে না।
এই রায়ের একটি বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে বাংলাদেশের জন্য।
বাংলাদেশ একটি নিচু ভূমি এবং ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের শিকার হচ্ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ঘন ঘন বন্যা, ঘূর্ণিঝড় এবং এর ফলে বাস্তুচ্যুতি—এগুলো বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয়।
আদালতের এই রায় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য একটি আইনি ভিত্তি তৈরি করেছে, যা তাদের অধিকার আদায়ে সহায়ক হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রায় জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
এর মাধ্যমে সরকারগুলো তাদের আইনি দায়িত্ব পালনে আরও বেশি সচেতন হবে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে।
একই সঙ্গে, ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো তাদের ক্ষতিপূরণ এবং ভবিষ্যতের জন্য আরও বেশি সুরক্ষা দাবি করতে পারবে।
তথ্য সূত্র: Associated Press