ফিলিস্তিনে আবারও ‘নাকবা’– জাতিসংঘের সতর্কবার্তা। জাতিসংঘের একটি বিশেষ কমিটি সতর্ক করে জানিয়েছে যে ফিলিস্তিনে সম্ভবত ‘আরেকটি নাকবা’ সংঘটিত হতে পারে।
‘নাকবা’ বলতে ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় ফিলিস্তিনিদের বিতাড়িত করার ঘটনাকে বোঝানো হয়।
কমিটি ইসরায়েলকে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ‘জাতিগত নির্মূল’ অভিযান চালানোর অভিযোগ করেছে এবং তাদের ওপর ‘অসহনীয় নির্যাতন’ চালানোর কথাও বলেছে।
জাতিসংঘের এই বিশেষ কমিটির মতে, গাজায় ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের বর্তমান পদক্ষেপগুলো গণহত্যার শামিল।
সংস্থাটি তাদের বিবৃতিতে জানায়, ইসরায়েল সরকার গাজার উত্তরাঞ্চলের হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে বিতাড়িত করে ৬টি ক্যাম্পে আবদ্ধ করার পরিকল্পনা করছে।
ফিলিস্তিনিদের জন্য এই ধরনের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি ‘নাকবা’র স্মৃতি ফিরিয়ে আনে।
‘নাকবা’ ছিল একটি বিভীষিকাময় ঘটনা, যেখানে ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় বহু ফিলিস্তিনিকে তাদের বাড়িঘর থেকে বিতাড়িত করা হয়েছিল।
কমিটি আরও জানায়, ইসরায়েল ক্রমাগতভাবে ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতন চালাচ্ছে।
তারা ভূমি জবরদখল করছে এবং বৃহত্তর ঔপনিবেশিক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে ফিলিস্তিনিদের বিতাড়িত করছে।
তাদের মতে, নিরাপত্তা অভিযানের আড়ালে দ্রুত ভূমি দখল, ব্যাপক বাস্তুচ্যুতি, ঘরবাড়ি ধ্বংস এবং জোরপূর্বক উচ্ছেদ করা হচ্ছে।
এর মাধ্যমে ফিলিস্তিনি জনবসতিগুলোকে সরিয়ে সেখানে ইহুদি বসতি স্থাপন করা হচ্ছে।
কমিটি ইসরায়েলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলিও উল্লেখ করেছে।
তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্যাতনের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের সাক্ষ্যে জানা যায় যে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনী নির্যাতন এবং অন্যান্য নিষ্ঠুর ও অমানবিক আচরণ করে থাকে।
এমনকি, কারাগারে ও সামরিক ডিটেনশন ক্যাম্পে যৌন সহিংসতাও একটি নিয়মিত ঘটনা।
নির্যাতনকারীরা মানুষকে অপমানিত করে, ভয় দেখায় এবং মানসিকভাবে দুর্বল করে তোলে।
কমিটি আরও উল্লেখ করেছে যে, গাজায় দীর্ঘদিন ধরে ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে রাখা হয়েছে, যার ফলে সেখানকার মানুষ খাদ্য সংকটে ভুগছে।
তাদের মতে, এমন একটি পরিস্থিতিতে, যখন কয়েক কিলোমিটার দূরে খাদ্য সরবরাহ মজুদ রয়েছে, তখন একটি সরকার কিভাবে একটি জনগোষ্ঠীকে অনাহারে মারতে পারে, তা কল্পনা করা কঠিন।
জাতিসংঘের এই বিশেষ কমিটি ১৯৬৮ সালের ডিসেম্বরে গঠিত হয়।
উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় প্রায় ৭ লাখ ৬০ হাজার ফিলিস্তিনি তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল।
যারা পালাতে পারেনি, তাদের মধ্যে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার ফিলিস্তিনি ইসরায়েলের অভ্যন্তরেই ছিল এবং বর্তমানে তারা দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ।
বর্তমানে এই কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া এবং সেনেগালের জাতিসংঘে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতরা।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা