আতঙ্কে বিশ্ব! ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতিতে কমছে অর্থনীতির গতি!

বৈশ্বিক অর্থনীতির গতি কমবে, সতর্কবার্তা জাতিসংঘের।

জাতিসংঘ সম্প্রতি পূর্বাভাস দিয়েছে যে, মার্কিন শুল্ক বৃদ্ধি ও বাণিজ্য সম্পর্কগুলোর অবনতির কারণে চলতি বছর এবং আগামী বছর বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি কমে যাবে। বিশ্ব অর্থনীতির এই মন্দা বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিভাগের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বজুড়ে অস্থির ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, সরবরাহ শৃঙ্খলে বিঘ্ন এবং আর্থিক অস্থিতিশীলতার মতো বিষয়গুলো অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ ও নীতি বিভাগের পরিচালক শান্তনু মুখার্জীর মতে, “বর্তমানে অনেক অনিশ্চয়তা রয়েছে।”

সংস্থাটি জানাচ্ছে, চলতি বছর বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হতে পারে ২.৪ শতাংশ, যা জানুয়ারিতে করা পূর্বাভাসের চেয়ে ০.৪ শতাংশ কম। গত বছর বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ছিল ২.৯ শতাংশ। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে দরিদ্র ও অনুন্নত দেশগুলো। তাদের প্রবৃদ্ধি ৪.৬ শতাংশ থেকে কমে ৪.১ শতাংশে নেমে আসতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উন্নত এবং উন্নয়নশীল উভয় দেশই ক্ষতির শিকার হবে। যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গত বছরের ২.৮ শতাংশ থেকে কমে এ বছর ১.৬ শতাংশে দাঁড়াতে পারে। শুল্ক বৃদ্ধি ও নীতিগত অনিশ্চয়তা বেসরকারি বিনিয়োগ ও ভোগে প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

চীনের প্রবৃদ্ধি গত বছরের ৫ শতাংশ থেকে কমে এ বছর ৪.৬ শতাংশে দাঁড়াতে পারে। এর কারণ হিসেবে দুর্বল ভোক্তা চাহিদা, রপ্তানিমুখী শিল্পে ব্যাঘাত এবং রিয়েল এস্টেট খাতে চলমান সমস্যাকে উল্লেখ করা হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রবৃদ্ধি গত বছরের ১ শতাংশের কাছাকাছি থাকতে পারে। যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ১.১ শতাংশ থেকে কমে ০.৯ শতাংশে নেমে আসার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও, দুর্বল বাণিজ্য, বিনিয়োগ হ্রাস এবং পণ্যের দাম কমে যাওয়ায় ব্রাজিল, মেক্সিকো ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো প্রধান উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও প্রবৃদ্ধি কমতে পারে। যদিও ভারত এখনো দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি, জাতিসংঘের পূর্বাভাস বলছে, তাদের প্রবৃদ্ধি ২০২৪ সালের ৭.১ শতাংশ থেকে কমে এ বছর ৬.৩ শতাংশ হতে পারে।

জাতিসংঘের এই পূর্বাভাস আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পূর্বাভাসের চেয়ে কম। শান্তনু মুখার্জি আরও জানান, দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে শুল্ক হ্রাসের সম্ভাবনা রয়েছে, যদিও তা সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফেব্রুয়ারির ঘোষণার আগের পর্যায়ে ফিরবে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনিশ্চয়তা দূর হলে ব্যক্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

বিশ্ব অর্থনীতির এই মন্দা বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর কারণ, বিশ্ব অর্থনীতির দুর্বলতা বাংলাদেশের রপ্তানি আয়, বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং রেমিট্যান্সের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। পোশাক শিল্পসহ বিভিন্ন খাতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তাই, এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের সতর্ক থাকতে হবে এবং বিশ্ব অর্থনীতির পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে প্রস্তুতি নিতে হবে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *