জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সুদানে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখুক: সংঘাতের আগুনে শান্তিরক্ষার আহ্বান
দক্ষিণ সুদানে চলমান সহিংসতা এবং মানবিক বিপর্যয়ের প্রেক্ষাপটে দেশটির উপর জাতিসংঘের অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার জন্য জোরালো আহ্বান জানানো হয়েছে। আগামী ২৯ মে এই নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনা করার কথা রয়েছে। এমতাবস্থায়, আন্তর্জাতিক মহল মনে করছে, অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হলে সংঘাত আরও বাড়বে, যা শান্তি ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়াকে কঠিন করে তুলবে।
২০১৮ সালে দক্ষিণ সুদানে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ (United Nations Security Council – UNSC) দেশটির উপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে অস্ত্রের বিস্তার রোধ করা এবং শান্তি ফিরিয়ে আনা। কিন্তু সম্প্রতি দেশটিতে সহিংসতা নতুন করে মাথাচাড়া দেওয়ায় এই নিষেধাজ্ঞার প্রয়োজনীয়তা আবারও সামনে এসেছে। বিশেষ করে, প্রেসিডেন্ট সালভা কির এবং প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট রিয়েক মাচারের মধ্যে বিদ্যমান রাজনৈতিক বিভেদ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
আফ্রিকা মহাদেশের কয়েকটি দেশ, যেমন সিয়েরা লিওন, সোমালিয়া এবং আলজেরিয়া, জাতিসংঘের এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পক্ষে মত প্রকাশ করেছে। তাদের যুক্তি হলো, অস্ত্র সরবরাহ স্বাভাবিক হলে সরকারি এবং বিরোধী দলগুলোর মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা সহজ হবে এবং নিরাপত্তা খাতে সংস্কার আনা যাবে। তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই পদক্ষেপ হিতে বিপরীত হতে পারে। কারণ, বর্তমানে দেশটিতে যে অস্থিরতা চলছে, তাতে অস্ত্রের অবাধ সরবরাহ সংঘাতকে আরও বাড়িয়ে দেবে।
মার্চ মাস থেকে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে দেশটিতে সংঘর্ষে অন্তত ১৮০ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া, মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (Doctors Without Borders – MSF)-এর একটি হাসপাতালে বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে, যেখানে বেশ কয়েকজন নিহত হয়। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, কোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হামলা যুদ্ধাপরাধের শামিল।
জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও, অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ হয়নি এমন অভিযোগ উঠেছে। কিছু দেশ গোপনে দক্ষিণ সুদানে সামরিক সরঞ্জাম পাঠিয়েছে, যা নিষেধাজ্ঞার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এছাড়া, দেশটির সামরিক হেলিকপ্টারগুলো এখনো সক্রিয় রয়েছে, যা অস্ত্র নিষেধাজ্ঞাকে দুর্বল করে দিচ্ছে।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের উচিত হবে, অস্ত্র নিষেধাজ্ঞাকে আরও কঠোরভাবে কার্যকর করা। একইসঙ্গে, দক্ষিণ সুদানের সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। আফ্রিকার দেশগুলোকে এই বিষয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতিসংঘের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখতে হবে। যদি অস্ত্র সরবরাহ অবাধ হয়, তবে তা কেবল সংঘাতকে আরও উস্কে দেবে, যা কারো কাম্য নয়।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা