আতঙ্কের জাল: এশিয়া থেকে বিশ্বজুড়ে সাইবার অপরাধ বাড়ছে!

শিরোনাম: জাতিসংঘের সতর্কবার্তা: এশীয় সাইবার অপরাধ চক্রের বিশ্বব্যাপী বিস্তার, বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকি?

সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘ সতর্ক করেছে যে, এশিয়া ভিত্তিক সাইবার অপরাধ চক্রগুলো দ্রুত বিশ্বজুড়ে তাদের জাল বিস্তার করছে। এই চক্রগুলো অনলাইন জালিয়াতির মাধ্যমে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে এবং এর প্রভাব এখন শুধু এশিয়াতেই সীমাবদ্ধ নেই।

উদ্বেগের বিষয় হলো, এই অপরাধ চক্রগুলো এখন আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জেও তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে।

জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক দপ্তর (UNODC) এর মতে, শুধু পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সাইবার জালিয়াতির কারণে ২০২৩ সালে প্রায় ৩৭ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির হিসাব করা হয়েছে। তবে বিশ্বজুড়ে ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বেশি।

এই চক্রগুলো মূলত মিয়ানমারের সীমান্ত অঞ্চল, কম্বোডিয়া এবং লাওসের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে ঘাঁটি গেড়েছে। তারা প্রায়ই মানব পাচারের শিকার হওয়া শ্রমিকদের ব্যবহার করে এসব অপরাধ সংঘটিত করে।

ভুয়া বিনিয়োগ, ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং প্রেমের ফাঁদ সহ বিভিন্ন ধরণের সাইবার অপরাধের মাধ্যমে তারা অর্থ উপার্জন করে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এই চক্রগুলো তাদের অর্থ পাচারের জন্য নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করছে। তারা এখন দক্ষিণ আমেরিকার মাদক চক্র, ইতালীয় মাফিয়া এবং আইরিশ গ্যাংস্টারদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হচ্ছে।

ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং, যা নতুন ক্রিপ্টোকারেন্সি তৈরি এবং লেনদেন যাচাইয়ের প্রক্রিয়া, তাদের অবৈধ অর্থ লুকানোর একটি প্রধান হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৩ সালের জুনে, লিবিয়ার কর্তৃপক্ষ একটি মিলিশিয়া নিয়ন্ত্রিত এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি অবৈধ ক্রিপ্টো মাইনিং অপারেশনে জড়িত প্রায় ৫০ জন চীনা নাগরিককে গ্রেপ্তার করে।

আমরা দেখছি পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংঘবদ্ধ অপরাধী গোষ্ঠীগুলোর বিশ্বব্যাপী বিস্তার ঘটছে। কর্তৃপক্ষ একটি স্থানে ব্যবস্থা নিলে, অপরাধীরা স্থান পরিবর্তন করে এবং নতুন প্রযুক্তির আশ্রয় নেয়।

বেনেডিক্ট হফম্যান

তিনি আরও বলেন, “এটা ক্যান্সারের মতো, যা দ্রুত ছড়িয়ে পরে।”

এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দেশগুলোকে সহযোগিতা করার এবং অপরাধ চক্রগুলোর অর্থায়ন বন্ধ করার জন্য জাতিসংঘের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে। বিশেষ করে, সাইবার অপরাধের বিস্তার রোধে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আরো বাড়ানো দরকার।

প্রশ্ন উঠতে পারে, এই সাইবার অপরাধের বিস্তার কি বাংলাদেশের জন্য কোনো ঝুঁকি তৈরি করছে? সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেহেতু এই চক্রগুলো বিশ্বজুড়ে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে, তাই বাংলাদেশের নাগরিকদেরও অনলাইনে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এক্ষেত্রে, আমাদের দেশের নাগরিকদের সচেতন হতে হবে এবং সন্দেহজনক অফার বা স্ক্যাম থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে চলতে হবে। একইসঙ্গে, সরকারকেও সাইবার নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

তথ্যসূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *