গাজায় ত্রাণ বিতরণে ইসরায়েলের নতুন ফন্দি? জাতিসংঘের কড়া হুঁশিয়ারি!

গাজায় ত্রাণ বিতরণের ইসরায়েলি পরিকল্পনার বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা। তাদের মতে, এই পরিকল্পনা ফিলিস্তিনিদের জন্য দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দেবে এবং জীবনহানির ঝুঁকি তৈরি করবে।

সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত একটি প্রস্তাবসহ ইসরায়েল ত্রাণ বিতরণের যে পরিকল্পনা পেশ করেছে, তা নিয়েই মূলত আপত্তি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো।

সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গাজায় খাদ্য, ওষুধ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রবেশের ওপর ইসরায়েলের নিষেধাজ্ঞা অবিলম্বে তুলে নেওয়া উচিত।

প্রায় ১০ সপ্তাহ ধরে অবরুদ্ধ গাজায় খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রীর অভাবে সেখানকার মানুষ, বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে অপুষ্টি ও ক্ষুধার তীব্রতা বাড়ছে। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের মুখপাত্র জেমস এল্ডার জেনেভা থেকে বলেছেন, “মানবিক সহায়তা কোনো দর কষাকষির বিষয় হতে পারে না।

গাজায় মানবিক সহায়তা বিতরণের জন্য একটি নতুন ব্যবস্থা চালুর কথা জানিয়েছেন ইসরায়েলের মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি। তিনি জানান, খুব শীঘ্রই ত্রাণ বিতরণ শুরু হবে।

তবে বিস্তারিত তথ্য পরে জানানো হবে। হাকাবি জানান, বিতরণ প্রক্রিয়ায় ইসরায়েলের সরাসরি কোনো সংশ্লিষ্টতা থাকবে না। বেসরকারি সংস্থাগুলো নিরাপত্তা দেবে, আর ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দূর থেকে ত্রাণ এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

তবে, এই পরিকল্পনার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের কর্মকর্তারা। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সমন্বয় কার্যালয় (ওসিএইচএ)-এর মুখপাত্র জেনস লারকে জানান, ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে তাঁদের উদ্বেগের নিরসন হয়নি।

তাঁর মতে, ইসরায়েলের পক্ষ থেকে জানানো পরিকল্পনা অনুযায়ী, অবরুদ্ধ গাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগে যে পরিমাণ ত্রাণ সরবরাহ করা হতো, তা পুনরায় চালু করা সম্ভব হবে না।

সংস্থাগুলোর আশঙ্কা, ইসরায়েলের এই পরিকল্পনা গাজাবাসীর দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দেবে।

কারণ, ত্রাণ বিতরণের জন্য কিছু কেন্দ্র তৈরি করা হবে, যেখানে খাদ্য পাওয়ার জন্য ফিলিস্তিনিদের যেতে হবে। সশস্ত্র নিরাপত্তা সংস্থাগুলো ত্রাণ সরবরাহ করবে এবং কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা দেবে। ইসরায়েল সাহায্যগ্রহীতাদের তালিকা যাচাই করতে চাইছে বলেও জানা গেছে।

ইউনিসেফের এল্ডারের মতে, এই পরিকল্পনা জীবনধারণের উপকরণ নিয়ন্ত্রণের একটি কৌশল হিসেবে দেখা যাচ্ছে। এর ফলে বাস্তুচ্যুতির শিকার হওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়বে।

দুর্বল ও অসুস্থ ব্যক্তিরা ত্রাণ কেন্দ্রগুলোতে যেতে সমস্যায় পড়বেন, যা তাঁদের জীবনকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলবে।

ইসরায়েল ইতোমধ্যেই গাজায় অবরোধ আরোপ করেছে। তারা হামাসকে অস্ত্র সমর্পণ এবং জিম্মিদের মুক্তি দিতে চাপ প্রয়োগ করছে।

মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই অবরোধকে ‘ক্ষুধা কৌশল’ এবং যুদ্ধাপরাধ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। জাতিসংঘের পাশাপাশি ত্রাণকর্মীরাও ইসরায়েলের এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করছেন।

তাঁদের মতে, এর ফলে ত্রাণ বিতরণে জটিলতা সৃষ্টি হবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে সহায়তা পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়বে।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনআরওয়া-এর মতে, গাজায় সাহায্য বিতরণের ক্ষেত্রে তাদের প্রতিস্থাপন করা কঠিন।

বর্তমানে, ইউএনআরওয়া-ই গাজায় সবচেয়ে বড় মানবিক সংস্থা। তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা জরুরি।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *