স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রতারণা: লাইম রোগের ভুল চিকিৎসা ও পরীক্ষার ফাঁদ
লাইম রোগ একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ, যা সাধারণত কিছু বিশেষ ধরনের (টিক) পোকার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। এই রোগ মানুষের শরীরে মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।
বাংলাদেশে লাইম রোগ ততটা পরিচিত না হলেও, উন্নত বিশ্বে এর প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে চামড়ায় গোলাকার ফুসকুড়ি, জ্বর, ক্লান্তি এবং শরীরে ব্যথা।
রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ প্রয়োগ করে এটি নিরাময় করা সম্ভব। তবে, অনেক সময় রোগ নির্ণয়ে জটিলতা দেখা দেয়, যার সুযোগ নেয় কিছু অসাধু চক্র।
তারা লাইম রোগের ভুল পরীক্ষা ও চিকিৎসার নামে রোগীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়।
লাইম রোগ নির্ণয়ের জন্য বর্তমানে যে পরীক্ষাগুলো প্রচলিত আছে, সেগুলোর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন, রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে, পরীক্ষার মাধ্যমে অ্যান্টিবডি সনাক্ত করা কঠিন হতে পারে।
কারণ, শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হতে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। আবার, একবার সংক্রমণ হয়ে গেলে, অ্যান্টিবডি অনেক দিন পর্যন্ত শরীরে থাকতে পারে।
ফলে, নতুন সংক্রমণ এবং পুরোনো সংক্রমণের মধ্যে পার্থক্য করা কঠিন হয়ে পড়ে। এই সুযোগে কিছু অসাধু ব্যক্তি ভুল পরীক্ষার নামে রোগীদের আকৃষ্ট করে।
তারা লালারস, প্রস্রাব বা অন্যান্য শরীরের তরল ব্যবহার করে লাইম রোগ পরীক্ষার দাবি করে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এই ধরনের পরীক্ষাগুলো নির্ভরযোগ্য নয় এবং রোগীকে ভুল পথে পরিচালিত করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, লাইম রোগের চিকিৎসার নামে প্রচলিত কিছু পদ্ধতি, যেমন—লেজার থেরাপি, ভেষজ চিকিৎসা, বা ইলেক্ট্রোম্যাগনেটের ব্যবহার—বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয় এবং এগুলো এড়িয়ে চলা উচিত।
অনেক ক্ষেত্রে, রোগীরা চিকিৎসার নামে হাজার হাজার টাকা খরচ করে এবং স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েন। কিছু ভুয়া চিকিৎসক দীর্ঘদিন ধরে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেন, যা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে।
অ্যান্টিবায়োটিক অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে শরীরের স্বাভাবিক ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয়ে যেতে পারে, যা হজমক্ষমতা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে তোলে।
যারা এই রোগে ভুগছেন, তাদের কষ্টের কারণগুলো চিহ্নিত করে উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
তিনি আরও যোগ করেন, “কিছু অসাধু চক্র লাইম রোগের চিকিৎসার নামে রোগীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে এবং এমন সব চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছে, যা হয়তো কোনো কাজে আসে না, বরং ক্ষতি করে।”
লাইম রোগের চিকিৎসার জন্য সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতনতা জরুরি। কোনো উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
নির্ভরযোগ্য পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নিশ্চিত করে, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করা উচিত। লাইম রোগ প্রতিরোধের জন্য টিক (পোকা) এর কামড় থেকে বাঁচতে হবে এবং আক্রান্ত স্থান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
এছাড়াও, স্বাস্থ্য বিষয়ক যেকোনো তথ্যের জন্য নির্ভরযোগ্য সূত্রের সাহায্য নেওয়া উচিত।
সতর্ক থাকুন এবং ভুল চিকিৎসার ফাঁদে পা দেওয়া থেকে নিজেকে বাঁচান।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস