**যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক কুরিয়ার সংস্থা ইউপিএস-এর কর্মী ছাঁটাই: বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রভাবের সম্ভবনা**
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ কুরিয়ার পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা ইউনাইটেড পার্সেল সার্ভিস (ইউপিএস) তাদের কর্মীবাহিনী থেকে প্রায় ২০,০০০ কর্মী ছাঁটাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সংখ্যাটি ইউপিএস-এর বিশ্বব্যাপী কর্মীর প্রায় ৪ শতাংশ।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং অ্যামাজনের সঙ্গে ব্যবসার পরিমাণ কমানোর সিদ্ধান্তের কারণে মূলত এই ছাঁটাই করা হচ্ছে। এছাড়া, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্কের অনিশ্চয়তাও এর একটি কারণ।
**অ্যামাজনের সঙ্গে ব্যবসা কমানোর সিদ্ধান্ত**
ইউপিএস তাদের বৃহত্তম গ্রাহক অ্যামাজনের সঙ্গে ব্যবসা কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করেছে। ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে অ্যামাজনের জন্য তাদের পরিষেবার পরিমাণ অর্ধেকে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউপিএস।
ইউপিএস-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ক্যারল টোমে জানিয়েছেন, অ্যামাজনের সঙ্গে তাদের যে ব্যবসা ছিল, তার বেশিরভাগই লাভজনক ছিল না এবং তাদের নেটওয়ার্কের জন্য উপযুক্তও ছিল না।
এই সিদ্ধান্তের ফলস্বরূপ, এরই মধ্যে অ্যামাজনের মাধ্যমে আসা ইউপিএস-এর প্যাকেজের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। গত প্রান্তিকে এই হার ছিল ১৬ শতাংশ, যা ইউপিএস-এর পূর্বাভাসের চেয়েও বেশি ছিল।
এর অংশ হিসেবে আগামী জুনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ৭৩টি ভবন বন্ধ করে দেওয়া হবে।
**প্রযুক্তি ও অটোমেশন-এর ব্যবহার বৃদ্ধি**
কর্মীর সংখ্যা কমানোর আরেকটি কারণ হলো, ইউপিএস তাদের বিভিন্ন কেন্দ্রে অটোমেশন বা স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে চলেছে। প্যাকেজ বাছাই থেকে শুরু করে লেবেল লাগানো, এমনকি ট্রাক লোড-আনলোডের মতো কাজগুলোতেও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়বে।
এর ফলে প্রায় ৪০০টি কেন্দ্রে আংশিকভাবে অথবা সম্পূর্ণভাবে অটোমেশন প্রক্রিয়া চালু করা হবে। কর্তৃপক্ষের মতে, এই পদক্ষেপের ফলে তারা কর্মী নির্ভরতা কমাতে পারবে।
**শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিক্রিয়া**
ইউপিএস-এর এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে শ্রমিক ইউনিয়ন। ‘টিমস্টার্স ইউনিয়ন’, যা ইউপিএস-এর ৩ লক্ষাধিক কর্মীর প্রতিনিধিত্ব করে, তারা জানিয়েছে, কোনো সদস্যকে ছাঁটাই করা হলে তারা এর বিরুদ্ধে লড়বে।
ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট শন ও’ব্রায়েন বলেছেন, “যদি ইউপিএস কর্পোরেট ব্যবস্থাপনায় কর্মী ছাঁটাই করতে চায়, তাহলে আমরা তাদের বাধা দেব না। কিন্তু যদি তারা আমাদের চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করার চেষ্টা করে, অথবা কর্মীদের অধিকার খর্ব করতে চায়, তাহলে ইউপিএস-কে কঠিন প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হবে।”
ইউপিএস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা তাদের চুক্তির সকল শর্ত মেনে চলতে বদ্ধপরিকর।
**বাণিজ্য শুল্কের প্রভাব এবং অনিশ্চয়তা**
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য শুল্ক, বিশেষ করে চীনের থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর আরোপিত ১৪৫ শতাংশ শুল্কের কারণে ইউপিএস কিছু ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তবে এর চূড়ান্ত প্রভাব এখনো স্পষ্ট নয়।
ক্যারল টোমে জানিয়েছেন, চীনের সঙ্গে ব্যবসা করা গ্রাহকরা ব্যবসা বন্ধ করার কথা ভাবছেন না, তবে তাদের অনেকেই জানেন না যে তারা পরবর্তীতে কী পদক্ষেপ নেবেন।
অনেকে এখনো শুল্ক কমানোর অপেক্ষায় রয়েছেন।
ইউপিএস মনে করে, শুল্কের কারণে তাদের গ্রাহকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সেই কারণে এবং অ্যামাজনের সঙ্গে ব্যবসা কমানোর ফলস্বরূপ, তারা ধারণা করছে যে দ্বিতীয় প্রান্তিকে তাদের রাজস্ব কমে যেতে পারে।
তবে তারা এখনো পুরো বছরের জন্য তাদের পূর্বাভাস পরিবর্তন করতে রাজি নয়, যদিও ভবিষ্যতে পরিস্থিতি বিবেচনা করে এটি পরিবর্তন করা হতে পারে।
**বাংলাদেশের জন্য এর তাৎপর্য**
এই ঘটনা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে পরিবর্তন এবং সরবরাহ শৃঙ্খলে যেকোনো ধরনের প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে।
ইউপিএস-এর এই কর্মী ছাঁটাই এবং প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত বিশ্ব অর্থনীতিতে পরিবর্তন আনছে, যা বাংলাদেশের আমদানি ও রপ্তানিকেও প্রভাবিত করতে পারে। বিশেষ করে, কুরিয়ার এবং লজিস্টিকস খাতে এর প্রভাব দেখা যেতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন