মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, একটি সুপরিচিত ক্লিনিক, যা ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে গর্ভপাতের পরিষেবা দিয়ে আসছিল, সম্প্রতি বন্ধ হয়ে গেছে। কলোরাডোর ‘বোল্ডার অ্যাবর্শন ক্লিনিক’-এর এই বিদায় সেখানকার মানুষের কাছে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
বিশেষ করে গর্ভধারণের দ্বিতীয় বা তৃতীয় পর্যায়ে থাকা রোগীদের জন্য এটি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ আশ্রয়স্থল। ক্লিনিকটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে এখন হাতে গোনা কয়েকটি ক্লিনিক অবশিষ্ট রইল, যেখানে এই ধরনের সেবা পাওয়া যায়।
ক্লিনিকটি বন্ধ হওয়ার প্রধান কারণ ছিল অর্থনৈতিক সংকট। সেই সঙ্গে কর্মী ও রোগীদের নিরাপত্তার বিষয়টিও ছিল।
ক্লিনিকের প্রতিষ্ঠাতা, ৮৭ বছর বয়সী ড. ওয়ারেন হর্ন, এই সিদ্ধান্তে অত্যন্ত দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “ক্লিনিক বন্ধ করা আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে একটি।”
যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভপাত বিষয়ক আইন বিভিন্ন রাজ্যে ভিন্ন ভিন্ন। ফেডারেল তথ্য অনুযায়ী, ২১ সপ্তাহের বেশি সময়ের গর্ভপাতের সংখ্যা মোট গর্ভপাতের মাত্র ১ শতাংশ।
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই সংখ্যাটি আরও বেশি হতে পারে। এর কারণ হিসেবে জানা যায়, কিছু রাজ্য, যেমন ক্যালিফোর্নিয়া, গর্ভপাতের বিষয়ে ফেডারেল সরকারের কাছে তাদের সম্পূর্ণ পরিসংখ্যান জমা দেয় না।
দেরিতে গর্ভপাতের কারণগুলোও বিভিন্ন। কিছু ক্ষেত্রে, ভ্রূণের শরীরে অস্বাভাবিকতা বা জন্মগত ত্রুটিগুলো ২০ সপ্তাহের পরে শনাক্ত করা যায়।
আবার, অনেক মহিলা প্রথম ট্রাইমেস্টারের পরেও তাদের গর্ভাবস্থা সম্পর্কে জানতে পারেন না। অনেক রাজ্যে গর্ভপাতের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকায়, দেরিতে গর্ভপাতের প্রয়োজনীয়তা আরও বাড়ে।
বোল্ডার ক্লিনিক বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, গর্ভপাতের জন্য অপেক্ষারত রোগীদের জন্য বিকল্প কমে গেছে। বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্রে ২৪ সপ্তাহের বেশি গর্ভপাতের পরিষেবা প্রদানকারী ক্লিনিকের সংখ্যা ২০টিরও কম।
এর মধ্যে নিউ মেক্সিকো, মেরিল্যান্ড এবং ওয়াশিংটন ডিসি-তে ২৮ সপ্তাহের বেশি সময়ের গর্ভপাতের সুযোগ রয়েছে।
চিকিৎসকদের মতে, দেরিতে গর্ভপাতের সিদ্ধান্ত নেওয়াটা খুবই কঠিন। কারণ অনেক সময়, ভ্রূণের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ফলাফল জানার জন্য বেশ কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়।
এরপর যদি কোনো জটিলতা দেখা দেয়, তখন ওই পরিস্থিতিতে একজন মাকে কঠিন সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হতে হয়।
এই পরিস্থিতিতে, গর্ভপাত বিরোধী সংগঠনগুলো ক্লিনিক বন্ধের ঘোষণাকে স্বাগত জানালেও, গর্ভপাত অধিকার সমর্থনকারীরা এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত রোগীদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাদের মতে, একটি ক্লিনিক বন্ধ হয়ে যাওয়া মানে হল, পরিষেবা পেতে ইচ্ছুক রোগীদের জন্য আরও বেশি অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হওয়া।
তথ্য সূত্র: সিএনএন