যুক্তরাষ্ট্রে আবারও একটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে চলেছে, যা দেশটির কয়েক মিলিয়ন মানুষের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করেছে। কয়েক দিন আগেই দেশটিতে আঘাত হানা একটি বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষত এখনো শুকায়নি, তার মধ্যেই এই নতুন দুর্যোগের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, এবারের ঝড়টি আগেরটির মতো একই রকম বিধ্বংসী না হলেও এর প্রভাবে তীব্র বজ্রঝড়, শক্তিশালী বাতাস, এমনকি তুষারঝড়ও হতে পারে। বিশেষ করে দেশটির মধ্যাঞ্চলে এর প্রভাব বেশি দেখা যাবে।
আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, মঙ্গলবার দুপুরের দিকে এই ঘূর্ণিঝড়টি ‘রকি পর্বতমালায়’ সৃষ্টি হতে পারে এবং রাতের মধ্যে এটি সমতল ভূমিগুলোতে পৌঁছে যাবে। বুধবার নাগাদ এটি আরও শক্তিশালী হয়ে মধ্য-পশ্চিমের রাজ্যগুলোর দিকে অগ্রসর হবে।
এই ঝড়ের প্রধান হুমকি হলো শক্তিশালী বাতাস। টেক্সাস থেকে শুরু করে মিনেসোটা পর্যন্ত প্রায় ১,৩০০ মাইলের বেশি এলাকাজুড়ে বুধবার বাতাসের গতি ঘণ্টায় প্রায় ৬৪ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে, যা গাছপালা এবং বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে ফেলতে সক্ষম।
**বনাঞ্চলে দাবানলের শঙ্কা**
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়ার পরিস্থিতি মার্চ মাস থেকে একই ধরনের রয়েছে। তাই আসন্ন ঝড়ের কারণে সৃষ্ট ঝুঁকিগুলোও অনেকটা একই রকম হতে পারে।
ঝড়টি তৈরি হওয়ার সাথে সাথে মঙ্গলবার সকাল থেকে রকি পর্বতমালা এবং সমতল ভূমিগুলোতে দমকা হাওয়া বইতে শুরু করবে। এর ফলে বনাঞ্চলে দাবানল ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যাবে। আবহাওয়া পূর্বাভাস কেন্দ্র (Storm Prediction Center) এরই মধ্যে ‘দাবানলের প্রাদুর্ভাবের’ ব্যাপারে সতর্ক করেছে।
আবহাওয়া পূর্বাভাস কেন্দ্র থেকে জানানো হয়েছে, নিউ মেক্সিকো, টেক্সাস এবং ওকলাহোমার কিছু অংশে দাবানলের উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে। সেখানকার শুকনো গাছপালা খুব সহজেই আগুন ধরতে পারে এবং তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। দমকা হাওয়ার কারণে কোনো একটি ছোট স্ফুলিঙ্গও মুহূর্তের মধ্যে বিশাল অগ্নিকাণ্ডের কারণ হতে পারে। এমনকি কিছু কিছু এলাকায় বাতাসের গতি ঘণ্টায় প্রায় ১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
বুধবারও দমকা হাওয়ার কারণে আগুনের ঝুঁকি থাকবে। টেক্সাসের পশ্চিমাঞ্চল এবং দক্ষিণাঞ্চলে দমকা হাওয়ার কারণে দাবানল দেখা দিতে পারে। ঝড়ের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে উত্তরাঞ্চলে শক্তিশালী বাতাস বইতে শুরু করবে, তবে দাবানলের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি এখনো দক্ষিণের শুষ্ক এলাকাগুলোতে বিদ্যমান।
উল্লেখ্য, গত কয়েক দিনের শক্তিশালী ঝড়ে সৃষ্ট দাবানলে এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত ঝড়ে উচ্চগতির বাতাসের কারণে সৃষ্ট দাবানলে ওকলাহোমার বিভিন্ন স্থানে কমপক্ষে ৪০০ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ৪ জন নিহত হয়েছে।
**ধুলোঝড়ের সতর্কতা**
শক্তিশালী বাতাসের কারণে ধুলো ও আবর্জনা উড়ে এসে দৃষ্টিসীমা কমিয়ে দিতে পারে এবং এতে মারাত্মক ধুলোঝড় সৃষ্টি হতে পারে। ধুলোঝড়ের কারণে কয়েক ফুটের বেশি দূরের জিনিস দেখা কঠিন হয়ে পড়ে এবং বাতাসের গুণমানও দ্রুত হ্রাস পায়।
গত শুক্রবার ধুলোঝড়ের কারণে দৃশ্যমানতা কমে যাওয়ায় কানসাস এবং টেক্সাসে অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছে, এদের মধ্যে গাড়ির দুর্ঘটনায় ৮ জন এবং ৪ জন নিহত হয়েছেন।
**তুষারঝড়ের পূর্বাভাস**
ঝড়টি মঙ্গলবার রাতের দিকে সমতল ভূমির কিছু অংশে এবং বুধবার সকালের মধ্যে মধ্য-পশ্চিমের কিছু অংশে তুষারপাত ঘটাতে পারে। পূর্বাভাসের হিসাব অনুযায়ী, পূর্বাঞ্চলীয় নেব্রাস্কা থেকে মিশিগানের উপরের উপদ্বীপ পর্যন্ত ভারী তুষারপাতের সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে বুধবার রাতের মধ্যে ১৫ সেন্টিমিটারের বেশি তুষার পড়তে পারে।
সাধারণত, মার্চ মাসে কয়েক ইঞ্চি তুষারপাত হলে মধ্য-পশ্চিম এবং সমতল ভূমিগুলোতে তেমন কোনো বড় ধরনের সমস্যা হয় না, তবে যদি শক্তিশালী বাতাস এর সঙ্গে যুক্ত হয়, তাহলে পরিস্থিতি গুরুতর হতে পারে।
তুষারঝড় হলো তুষারপাত এবং শক্তিশালী বাতাসের সম্মিলিত রূপ, যা কয়েক ঘণ্টার জন্য ‘শ্বেত দৃশ্যমানতা’ তৈরি করে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে কয়েক ফুটের বেশি দূরের জিনিস দেখা কঠিন হয়ে পড়ে, অনেকটা ধুলোঝড়ের মতোই।
আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, নেব্রাস্কা, আইওয়া এবং মিনেসোটার কিছু অংশে বুধবার বাতাসের গতি ঘণ্টায় প্রায় ৮০ কিলোমিটারের বেশি হতে পারে। এমনকি সামান্য তুষারপাতের ফলেও শ্বেত দৃশ্যমানতা তৈরি হতে পারে।
আইওয়ার ডে মইনেসের জাতীয় আবহাওয়া পরিষেবা সতর্ক করে বলেছে, তুষারঝড়ের কারণে ভ্রমণ ‘বিপজ্জনক এবং জীবনহানিকর’ হতে পারে।
**বজ্রঝড়ের আশঙ্কা**
বুধবার মধ্য-পশ্চিম থেকে উপসাগরীয় উপকূল পর্যন্ত বজ্রঝড় হতে পারে এবং এর কিছু অংশ মারাত্মক রূপ নিতে পারে।
আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, এবারের বজ্রঝড়ের তীব্রতা গত সপ্তাহের টর্নেডোর মতো ব্যাপক ও মারাত্মক না হলেও, এটি উদ্ধার কার্যক্রমকে ব্যাহত করতে পারে এবং আগের ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া কিছু এলাকার জন্য নতুন করে উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
মঙ্গলবার রাতের দিকে মধ্য-পশ্চিমের কিছু অংশে বজ্রঝড় শুরু হবে। বেশিরভাগ ঝড় মারাত্মক না হলেও, আইওয়াসহ কয়েকটি স্থানে বুধবার সকাল পর্যন্ত শিলাবৃষ্টি হতে পারে।
বুধবার দুপুরের দিকে মধ্য-পশ্চিমের কিছু অংশে আরও বজ্রঝড় সৃষ্টি হতে পারে এবং এটি টেনেসি ও মিসিসিপি হয়ে আলাবামার কিছু অংশে রাতে আঘাত হানতে পারে। শক্তিশালী বাতাস ও শিলাবৃষ্টি এক্ষেত্রে প্রধান উদ্বেগের কারণ। তবে টর্নেডোর সম্ভাবনাও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
তথ্য সূত্র: সিএনএন।