শিরোনাম: দূষিত বাতাসে জর্জরিত আমেরিকা: স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে কোটি কোটি মানুষ
ঢাকার মতো বিশ্বের অনেক শহরেই বায়ু দূষণ এখন একটি উদ্বেগের বিষয়। সম্প্রতি, একটি নতুন প্রতিবেদনে জানা গেছে, এই দূষণের শিকার এখন উন্নত দেশ আমেরিকাও।
দেশটির প্রায় অর্ধেক মানুষ এমন সব এলাকায় বাস করে যেখানে বায়ুর মান অত্যন্ত খারাপ। আমেরিকান লাং অ্যাসোসিয়েশনের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বায়ু দূষণের মাত্রা বেড়েছে এবং এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যাও বেড়েছে অনেক। এই সময়ে, প্রায় ১৫ কোটি ৬০ লক্ষ আমেরিকান নাগরিক এমন সব অঞ্চলে বসবাস করেছেন যেখানে ওজোন এবং সূক্ষ্ম কণা-সংক্রান্ত দূষণ মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে।
গত বছরের তুলনায় এই সংখ্যা প্রায় ২ কোটি ৫০ লক্ষ বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা (ইপিএ) অনুসারে, বায়ুতে ভাসমান কঠিন ও তরল কণার মিশ্রণকে ‘পার্টিকুলেট ম্যাটার’ বা কণা দূষণ বলা হয়। এটি মূলত ধুলো, বালি বা ধোঁয়ার আকারে থাকে।
কয়লা ও প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে তৈরি হওয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্র, গাড়ি, শিল্প কারখানা, নির্মাণ কাজ এবং দাবানলের মতো বিভিন্ন উৎস থেকে এই দূষণ ছড়ায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই কণাগুলো এতই ছোট যে তা মানবদেহের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেদ করে ফুসফুসে প্রবেশ করতে পারে এবং রক্তপ্রবাহে মিশে যেতে পারে। এর ফলে শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ, এমনকি ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, কণা দূষণের কারণে বিশ্বে অকাল মৃত্যুর অন্যতম কারণ হলো বায়ু দূষণ।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, আমেরিকার প্রায় ৮ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষ এমন সব এলাকায় বাস করে যেখানে সারা বছর ধরেই কণা দূষণের মাত্রা বিপদজনক অবস্থায় থাকে। এছাড়া, স্বল্প মেয়াদে কণা দূষণের কারণে শ্বাসকষ্ট হতে পারে বা হৃদরোগের আক্রমণও হতে পারে।
প্রতিবেদনে ওজোন দূষণের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে। বিদ্যুতের ব্যবহার, গাড়ির ধোঁয়া, শিল্প কারখানা এবং রাসায়নিক দ্রবণ থেকে নির্গত হওয়া কিছু রাসায়নিক পদার্থ সূর্যের আলোকের সংস্পর্শে এসে গ্রাউন্ড-লেভেল ওজোন তৈরি করে, যা এই দূষণের মূল কারণ।
ওজোন দূষণের কারণে শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা এবং দীর্ঘমেয়াদে ফুসফুসের কার্যকারিতা কমে যাওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় কৃষ্ণাঙ্গ এবং হিস্পানিক সম্প্রদায়ের মানুষেরা দূষিত এলাকায় বসবাস করতে বেশি বাধ্য হয়। এদের মধ্যে, যারা হিস্পানিক, তারা শ্বেতাঙ্গদের চেয়ে তিনগুণ বেশি বায়ু দূষণের শিকার হয়।
চিকিৎসকরা বলছেন, বায়ু দূষণের কারণে শিশুদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা বাড়ছে। শিকাগোর একজন চিকিৎসক জানান, একটি কারখানার ভাঙনের ফলে সৃষ্ট ধুলো কয়েক মাইল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল, যার ফলে সেখানকার শিশুরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে, যুক্তরাষ্ট্রের সরকার দূষণ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিধিমালা সহজ করার পরিকল্পনা করছে। পরিবেশবিদরা মনে করছেন, সরকারের এমন পদক্ষেপের ফলে বায়ু দূষণের মাত্রা আরও বাড়তে পারে এবং জনস্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিস্থিতি আমাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা। বায়ু দূষণ একটি বৈশ্বিক সমস্যা এবং এর থেকে বাঁচতে হলে প্রয়োজন সমন্বিত পদক্ষেপ ও সচেতনতা।
তথ্য সূত্র: সিএনএন