ইরান-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনা: উত্তেজনা বাড়ছে, মধ্যপ্রাচ্যে আরও একটি মার্কিন যুদ্ধজাহাজ!

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা শুরুর প্রাক্কালে মধ্যপ্রাচ্যে দ্বিতীয় একটি মার্কিন যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করা হয়েছে।

খবর অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে আলোচনার দ্বিতীয় দফা শুরুর আগে, এই অঞ্চলে সামরিক শক্তি প্রদর্শন করা হচ্ছে। মঙ্গলবার স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবিতে দেখা গেছে, ইউএসএস কার্ল ভিনসন নামের একটি মার্কিন যুদ্ধজাহাজ আরব সাগরে টহল দিচ্ছে।

মার্কিন কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, ইরানের সঙ্গে আলোচনাকে প্রভাবিত করতে তারা ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের ওপর বিমান হামলা জোরদার করেছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা এই হামলায় হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে।

তবে, আলোচনার স্থান নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা রয়েছে। প্রথমে খবর পাওয়া গিয়েছিল যে ইতালির রোমে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে, কিন্তু পরে ইরান জানায় তারা ওমানে ফিরতে চায়।

এখন পর্যন্ত, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আলোচনার স্থান সম্পর্কে কোনো নিশ্চিত খবর পাওয়া যায়নি।

এই আলোচনার গুরুত্ব অপরিসীম। প্রায় অর্ধশতক ধরে চলা দুই দেশের বৈরিতার অবসান ঘটানোর এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যদি কোনো সমঝোতায় পৌঁছানো না যায়, তবে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলার হুমকি দিয়েছিলেন। অন্যদিকে, ইরানের কর্মকর্তারা তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রমকে দ্রুততার সঙ্গে অস্ত্র তৈরির পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন।

তবে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি প্রথম দফা আলোচনাকে ‘ভালো’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

তিনি বলেন, ‘প্রথম পদক্ষেপগুলো ভালোভাবে নেওয়া হয়েছে। এখন থেকে প্রক্রিয়াটি সতর্কতার সঙ্গে অনুসরণ করা উচিত। আমাদের এবং অন্যদের জন্য ‘রেড লাইন’গুলো স্পষ্ট। ফল আসুক বা না আসুক, আলোচনা চালিয়ে যাওয়া মূল্যবান।’

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ জানিয়েছেন, ট্রাম্প প্রশাসন ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির শর্তগুলো আলোচনার ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করতে পারে, যেখান থেকে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছিল।

তিনি গত সপ্তাহের আলোচনাকে ‘ইতিবাচক, গঠনমূলক এবং আকর্ষণীয়’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

উইটকফ আরও বলেন, ‘আমরা দেখতে চাই, কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা যায় কিনা।

এর মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র এবং বোমা তৈরির উপাদানগুলোও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

অন্যদিকে, কার্ল ভিনসনের আগমন হয় এমন এক সময়ে, যখন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনি তেহরানে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার সময় আলোচনার অগ্রগতিতে সমর্থন জানান।

তিনি বলেন, ‘আমাদের এই সংলাপ নিয়ে অতিরিক্ত আশাবাদী বা হতাশ হওয়ার কিছু নেই। প্রথম পদক্ষেপগুলো ভালো হয়েছে। এখান থেকে প্রক্রিয়াটি সতর্কতার সঙ্গে অনুসরণ করতে হবে।’

উইটকফ ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির জন্য ৩.৬৭% সমৃদ্ধকরণ মাত্রা নির্ধারণের প্রস্তাব করেছেন। তাঁর মতে, ইরানের এই পরিমাণ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার প্রয়োজন নেই।

২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিতে ইরান রাজি হয়েছিল তাদের ইউরেনিয়ামের মজুদ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে এবং ৩.৬৭% পর্যন্ত সমৃদ্ধ করতে।

বিনিময়ে ইরানের ওপর থেকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়। তবে, ২০১৮ সালে ট্রাম্প এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডারকে চুক্তির একটি দুর্বলতা হিসেবে চিহ্নিত করেন।

ইরানের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ‘জাভান’ এক সম্পাদকীয়তে জানায়, তেহরান সম্ভবত তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কমাতে রাজি হবে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *