আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় চালানো সন্দেহজনক মার্কিন বিমান হামলায় অন্তত ৬ জন নিহত হয়েছে। সোমবার হুতি বিদ্রোহীরা এই তথ্য জানিয়েছে।
তারা আরও দাবি করেছে যে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের একটি এমকিউ-৯ রিপার ড্রোন ভূপাতিত করেছে।
হুতিদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সোমবার এক বিবৃতিতে জানায়, গত এক মাস ধরে চলা মার্কিন বিমান হামলায় এ পর্যন্ত ১২০ জনের বেশি নিহত হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে এই হামলাগুলো চালানো হচ্ছে।
এর লক্ষ্য হলো, মধ্যপ্রাচ্যের জলসীমায় বাণিজ্যিক জাহাজে হুতি বিদ্রোহীদের চালানো হামলার জবাব দেওয়া, যা মূলত ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্কিত।
হুতিদের আল-মাসিরাহ স্যাটেলাইট নিউজ চ্যানেলে প্রচারিত ফুটেজে দেখা গেছে, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা একটি কারখানার আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন।
বিদ্রোহীরা বলছে, রাজধানী সানার বানি মাতার এলাকার একটি সিরামিক কারখানায় বিমান হামলার কারণে এই আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।
ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধারকর্মীরা হতাহতদের সরিয়ে নিচ্ছিল।
তবে, মার্কিন সামরিক বাহিনী পরিচালিত সেন্ট্রাল কমান্ড (CENTCOM) হামলার কথা স্বীকার করেনি।
১৫ মার্চ থেকে শুরু হওয়া এই অভিযানে হোয়াইট হাউসের অনুমোদনে ইচ্ছেমতো হামলা চালানোর অনুমতি রয়েছে তাদের।
এমনকি, মার্কিন সামরিক বাহিনী এখন পর্যন্ত হামলার লক্ষ্যবস্তু সম্পর্কে কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ২০০টির বেশি হামলা চালানো হয়েছে।
এদিকে, হুতি বিদ্রোহীরা রোববার রাতে ইয়েমেনের হাজ্জাহ প্রদেশের আকাশে একটি এমকিউ-৯ রিপার ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করেছে।
দেশটির উত্তর-পশ্চিমের এই প্রদেশটি লোহিত সাগরের পাশে, যা সৌদি আরবের সঙ্গে দেশটির সীমান্তবর্তী এলাকা।
হুতি সামরিক মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াহিয়া সারি এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, গত দুই সপ্তাহে বিদ্রোহীরা চতুর্থবারের মতো ড্রোন ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি জানান, স্থানীয়ভাবে তৈরি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ড্রোনটি ভূপাতিত করা হয়েছে।
তাদের কাছে ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, যেমন ইরানের তৈরি ‘৩৫৮’ ক্ষেপণাস্ত্র, যা বিমান ভূপাতিত করতে সক্ষম।
ইরান অবশ্য বিদ্রোহীদের অস্ত্র সরবরাহের কথা অস্বীকার করেছে।
তবে, জাতিসংঘের অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও, তেহরান-নির্মিত অস্ত্রশস্ত্র প্রায়ই যুদ্ধক্ষেত্রে এবং ইয়েমেনের উদ্দেশ্যে যাওয়া সমুদ্রপথে পাওয়া যায়।
জেনারেল অ্যাটোমিক্স রিপার ড্রোনগুলোর প্রতিটির দাম প্রায় ৩ কোটি মার্কিন ডলার।
যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩২০ কোটি টাকার বেশি।
এটি ৪০,০০০ ফুটের বেশি উচ্চতায় উড়তে পারে এবং একটানা ৩০ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আকাশে থাকতে পারে।
দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র এবং সিআইএ এই ড্রোন ব্যবহার করে আসছে, বিশেষ করে আফগানিস্তান, ইরাক এবং বর্তমানে ইয়েমেনে।
সেন্ট্রাল কমান্ড ড্রোন ভূপাতিত করার খবর সম্পর্কে অবগত আছে বলে জানিয়েছে, তবে বিস্তারিত কিছু জানায়নি।
মার্কিন এই হামলাগুলো মূলত গত এক মাস ধরে তীব্রভাবে চলছে।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের তুলনায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে হুতিদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযান আরও ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র এখন শুধু লঞ্চিং সাইটগুলিতে হামলা না করে, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে এবং শহরগুলোতে বোমা ফেলছে।
এই নতুন বিমান হামলার সূচনা হয়, যখন বিদ্রোহীরা গাজায় সাহায্য পাঠাতে ইসরায়েলের বাধা দেওয়ার প্রতিক্রিয়ায়, ইসরায়েলি জাহাজগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করার হুমকি দেয়।
হুতিরা ‘ইসরায়েলি জাহাজ’ বলতে কী বোঝায়, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো সংজ্ঞা দেয়নি।
ফলে অনেক জাহাজ তাদের হামলার শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত, হুতিরা ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ব্যবহার করে ১০০টির বেশি বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা চালিয়েছে।
এর মধ্যে দুটি জাহাজ ডুবে গেছে এবং চারজন নাবিকের মৃত্যু হয়েছে।
তারা আমেরিকান যুদ্ধজাহাজগুলোকেও লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছিল, তবে সেগুলো সফল হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হুতিদের ওপর চালানো বিমান হামলার সঙ্গে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে নিয়ন্ত্রণে আনারও চেষ্টা চলছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস