শিরোনাম: ইয়েমেনের তেল বন্দরে মার্কিন বিমান হামলা: নিহত অন্তত ৩৮, অভিযোগ হাউছিদের
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় ইয়েমেনের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত একটি তেল বন্দরে অন্তত ৩৮ জন নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। হাউছি নিয়ন্ত্রিত আল-মাসিরাহ টিভি শুক্রবার এই তথ্য জানিয়েছে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযান আরও জোরদার হওয়ার পর এটি সবচেয়ে মারাত্মক ঘটনার একটি।
মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানায়, হুদাইদাহ প্রদেশের রাস ইসা তেল বন্দরে চালানো এই হামলা হুতিদের রাজস্ব বন্ধ করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে।
তাদের অভিযোগ, বন্দরটি হুতিদের অবৈধ মুনাফার উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “এই হামলার লক্ষ্য ছিল হুতিদের অর্থনৈতিক শক্তি হ্রাস করা, যারা তাদের স্বজাতিদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে।”
আল-মাসিরাহ্ টিভি’র খবরে বলা হয়েছে, নিহত সবাই বন্দরের কর্মী ছিলেন।
হামলায় আরও ১০২ জন আহত হয়েছে। তারা হাউছি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আঞ্চলিক অফিসের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরকে (পেন্টাগন) হতাহতের সংখ্যা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তারা সেন্ট্রাল কমান্ডের আগের বিবৃতির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
গত মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে, যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনে হুতিদের লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালাচ্ছে।
এর মধ্যে তেল শোধনাগার, বিমানবন্দর এবং ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিগুলোও রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, হুতিদের “ব্যাপক শক্তি” প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিহত করা হবে, যতক্ষণ না তারা লোহিত সাগরে নৌ-চলাচল বন্ধ করতে সক্ষম হয়।
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের প্রতিবাদে হুতি বিদ্রোহীরা ইসরায়েলের দিকে বহু ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে এবং লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা চালিয়েছে।
আল-মাসিরাহ্ টিভিতে প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাদের শরীরে গুরুতর পোড়া ক্ষত ছিল।
একজন বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্মী জানান, “একাধিকবার বিমান হামলা চালানো হয়। আমি মাটিতে পড়ে যাই, যখন একটি রকেট আঘাত হানে।”
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরেকজন আহত ব্যক্তি বন্দরের ঘটনার বর্ণনা দেন।
তিনি বলেন, “একটার পর একটা আঘাত হানা হয়, পুরো এলাকা আগুনে ঢেকে যায়। আমরা যখন এলাকা ছাড়তে সক্ষম হই, তখন দেখি যে স্থানে আমরা আশ্রয় নিয়েছিলাম, সেটিও আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে।”
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে, তাদের এই অভিযান সফল হচ্ছে।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালজ বলেছেন, অনেক হুতি নেতা নিহত হয়েছেন।
তবে, যুক্তরাষ্ট্রের অভিযান সত্ত্বেও হুতিদের সক্ষমতার ওপর সীমিত প্রভাব পড়েছে বলে জানা গেছে।
যদিও বিশ্লেষকদের মতে, প্রায় ৮০ জন হুতি সামরিক কর্মকর্তা নিহত হয়েছে, কিন্তু তাদের সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে।
ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্রগুলোর কিছু অংশও অক্ষত আছে।
এদিকে, হুতি নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১৫ই মার্চ থেকে মার্কিন হামলায় নারী ও শিশুসহ অন্তত ১২৩ জন নিহত হয়েছে এবং ২৪৭ জন আহত হয়েছে।
তবে, এই সংখ্যাগুলো স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি।
অন্যদিকে, হুতিরা ইসরায়েলের দিকে এক ডজনের বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং মার্কিন নৌবাহিনীর জাহাজে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা অব্যাহত রেখেছে।
যদিও এতে বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হয়নি, তবে হুমকি এখনো বিদ্যমান।
শুক্রবার সকালে, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানায়, তারা ইয়েমেন থেকে আসা একটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করেছে।
ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা জানিয়েছে, এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
তথ্যসূত্র: সিএনএন