মার্কিন হামলায় হুতি বিদ্রোহীদের ২ জন নিহত, ট্রাম্পের ভিডিওতে মৃতের সংখ্যা বেশি?

**ইয়েমেনে মার্কিন বিমান হামলা: হতাহতের সংখ্যা নিয়ে ধোঁয়াশা, ট্রাম্পের ভিডিওতে ভিন্ন চিত্র**

মধ্যপ্রাচ্যের অস্থির পরিস্থিতি আরও ঘনীভূত হচ্ছে। ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের ওপর মার্কিন বিমান হামলার তীব্রতা বেড়েছে।

বিদ্রোহীদের পক্ষ থেকে হতাহতের যে সংখ্যা জানানো হচ্ছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পোস্ট করা একটি ভিডিওতে হতাহতের সংখ্যা তার চেয়ে বেশি বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

রবিবার (গতকাল) হুতি বিদ্রোহীদের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত সা’দা অঞ্চলে বিমান হামলায় অন্তত দুইজন নিহত এবং আরও চারজন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। হুতিদের আল-মাসিরাহ স্যাটেলাইট নিউজ চ্যানেলে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে একটি দ্বিতল ভবন ধসে পড়তে দেখা গেছে।

বিদ্রোহীদের দাবি, ভবনটিতে একটি সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ছিল। তবে, হামলার বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য জানায়নি তারা।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন, যেখানে একটি স্থানে বোমা হামলার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।

ভিডিওটিতে বেশ কয়েকজন মানুষকে একটি বৃত্তে জড়ো হয়ে থাকতে দেখা যায়। এর কিছুক্ষণ পরেই সেখানে বিস্ফোরণ ঘটে।

ট্রাম্প দাবি করেছেন, “হুতি বিদ্রোহীরা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তাদের আর কোনো হামলার সুযোগ দেওয়া হবে না।” তবে, হামলার স্থান বা হতাহতের সংখ্যা সম্পর্কে কোনো তথ্য দেননি তিনি।

মার্কিন সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ড, যারা মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কার্যক্রম পরিচালনা করে, তারা এখন পর্যন্ত হামলার বিষয়ে কোনো বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেনি। হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত ১৫ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত হুতি বিদ্রোহীদের ওপর ২০০টির বেশি হামলা চালানো হয়েছে।

এদিকে, হুতি নিয়ন্ত্রিত “সাবা” নিউজ এজেন্সি একটি সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, হামলার সময় হুদাইদা প্রদেশে ঈদুল ফিতরের একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে হামলা চালানো হয়।

বিশ্বজুড়ে মুসলমানরা যখন ঈদুল ফিতর উদযাপন করছিলেন, তখন এই ঘটনা ঘটে। সাবা আরও জানায়, হামলায় “ডজনখানেক” মানুষ নিহত ও আহত হয়েছে। তবে, নিহতদের সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন বিমান হামলার লক্ষ্য এখন ধীরে ধীরে পরিবর্তন হচ্ছে।

আগে শুধু ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্রগুলো লক্ষ্য করে হামলা চালানো হতো, কিন্তু এখন হুতি নেতাদের পাশাপাশি তাদের কমান্ড সেন্টার এবং অবকাঠামোতেও আঘাত হানা হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই হামলাগুলো মূলত ইরানকে চাপে ফেলার উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে।

কারণ, ইরান দ্রুত পারমাণবিক কর্মসূচি তৈরির দিকে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। হুতি বিদ্রোহীরা দীর্ঘদিন ধরে ইয়েমেনের ক্ষমতা ধরে রেখেছে।

তারা লোহিত সাগর এবং এডেন উপসাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা চালাচ্ছে। তাদের এই কার্যক্রমের কারণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বিশেষ করে, লোহিত সাগরে জাহাজ চলাচলে বিঘ্ন ঘটায় অনেক দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব পড়ছে, যার মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতিও অন্তর্ভুক্ত।

২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত হুতি বিদ্রোহীরা ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ব্যবহার করে ১০০টির বেশি বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা চালিয়েছে।

এতে দুটি জাহাজ ডুবে গেছে এবং চারজন নাবিকের মৃত্যু হয়েছে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *