মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণে হুতিদের ধ্বংসলীলা! ভয়াবহ পরিণতি?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে বিমান হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে। এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা এবং বিশ্ব বাণিজ্য-এর ওপর এর সম্ভাব্য প্রভাবের কারণে।

জানা গেছে, গত কয়েকদিনে চালানো হামলায় অন্তত ৫৩ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে শিশুরাও রয়েছে। এই ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন হুতি বিদ্রোহীরা ২০২৩ সালের নভেম্বর মাস থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত একশটির বেশি বাণিজ্যিক জাহাজে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়।

তাদের দাবি ছিল, গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদস্বরূপ তারা এই হামলা চালিয়েছে। এর ফলে লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরের মতো গুরুত্বপূর্ণ নৌপথগুলোতে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে, যা এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে পণ্য পরিবহনে বিঘ্ন ঘটিয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক বিবৃতিতে হুতিদের ‘সন্ত্রাসী কার্যক্রম’ এবং ‘নৌ-ডাকাতির’ তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি বলেছেন, যতক্ষণ না পর্যন্ত তাদের ‘লক্ষ্য’ অর্জিত হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত এই হামলা চলবে।

তবে, হুতিদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক পদক্ষেপ নতুন নয়। এর আগে, সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য যৌথভাবে হুতিদের ওপর বেশ কয়েক দফা বিমান হামলা চালায়।

আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ-এর তথ্য অনুযায়ী, বাইডেন প্রশাসনের সময়ে প্রায় ২৬০ বারের বেশি হামলা চালানো হয়েছিল।

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই নতুন আগ্রাসী নীতি সম্ভবত হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপের ইঙ্গিত বহন করে। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত আরও বাড়তে পারে, যা ওই অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য উদ্বেগের কারণ।

বিশেষ করে, হুতি বিদ্রোহীরা ইতোমধ্যেই ‘ইসরায়েলি’ জাহাজগুলোর ওপর হামলার ঘোষণা দিয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

এই পরিস্থিতিতে ইরানের ভূমিকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিন ধরেই হুতি বিদ্রোহীদের অস্ত্র ও সামরিক সহায়তা দেয়ার অভিযোগ রয়েছে ইরানের বিরুদ্ধে। যদিও তেহরান বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে, তবে বিভিন্ন প্রমাণে এর সত্যতা পাওয়া যায়।

ইরানের বিপ্লবী গার্ডের কমান্ডার জেনারেল হোসেইন সালামি বলেছেন, ইয়েমেনিরা একটি স্বাধীন জাতি এবং তাদের নিজস্ব নীতি রয়েছে। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, হুতি বিদ্রোহীদের প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দেয়ার সঙ্গে জড়িত বিপ্লবী গার্ডের কর্মকর্তাদেরও হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, হুতি বিদ্রোহীদের ওপর মার্কিন হামলা মূলত ইরানের প্রতি একটি সতর্কবার্তা। কারণ, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার টেবিলে ফিরতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। এই পরিস্থিতিতে, মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে, যা বিশ্ব অর্থনীতি ও বাংলাদেশের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে।

লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার কারণে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *