আলোচনা: যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ অবসানে কি মিলবে আশা?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য বিরোধ নিরসনের লক্ষ্যে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই বৈঠকে উভয় দেশের শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্য প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।

বিশ্ব অর্থনীতির দুই প্রধান চালিকাশক্তির মধ্যেকার এই আলোচনা বাণিজ্য সম্পর্ককে স্থিতিশীল করতে এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে আশার আলো জাগাতে পারে।

মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট এবং ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ জ্যামিসন গ্রিয়ারের নেতৃত্বে মার্কিন প্রতিনিধি দল চীনের ভাইস প্রিমিয়ার, হে লিফেংয়ের সঙ্গে আলোচনা করবেন। যদিও তাৎক্ষণিক কোনো বড় সাফল্যের সম্ভাবনা কম, তবে উভয় দেশ তাদের পণ্যের ওপর আরোপিত বিশাল শুল্ক হ্রাসের বিষয়ে আলোচনা করতে পারে।

এমনটা হলে বিশ্ব আর্থিক বাজার এবং যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য নির্ভর কোম্পানিগুলো কিছুটা স্বস্তি পাবে।

বর্তমানে, চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে। অন্যদিকে, চীনও মার্কিন পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসিয়েছে।

এই উচ্চ শুল্কের কারণে উভয় দেশ কার্যত একে অপরের পণ্য বয়কট করছে, যার ফলস্বরূপ গত বছর ৬60 বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি মূল্যের বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বৈঠক শুরুর আগে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক বক্তব্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে যুক্তরাষ্ট্র চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক কমাতে পারে।

তিনি এক সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “৮০ শতাংশ শুল্ক সঠিক বলে মনে হচ্ছে! স্কটের (বেসেন্ট) উপর নির্ভর করছে।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বৈঠকে বড় ধরনের কোনো ফল নাও আসতে পারে। তবে উভয় পক্ষ যদি শুল্ক কমানোর বিষয়ে রাজি হয়, তবে এটি একটি ইতিবাচক সংকেত দেবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার শাসনামলে বাণিজ্য শুল্ককে একটি প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। এর অংশ হিসেবে, তিনি বিশ্বের প্রায় সব দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন।

চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ ছিল সবচেয়ে তীব্র। ফেন্টানিল নামক মাদক পাচার বন্ধ করতে চীনকে চাপ দিতে তিনি দেশটির ওপর অতিরিক্ত ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন।

এছাড়াও, প্রযুক্তিগত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরোধের জেরে আরও ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

আগের আলোচনাগুলোতে, যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করেছিল যে চীন কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং চালকবিহীন গাড়ির মতো উন্নত প্রযুক্তিতে নিজেদের সুবিধা অর্জনের জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। এর মধ্যে ছিল—মার্কিন কোম্পানিগুলোকে চীনের বাজারে প্রবেশাধিকারের বিনিময়ে তাদের বাণিজ্য গোপনীয়তা প্রকাশ করতে বাধ্য করা, সরকারি অর্থ ব্যবহার করে দেশীয় প্রযুক্তি firm-গুলোকে ভর্তুকি দেওয়া, এবং সংবেদনশীল প্রযুক্তি চুরি করা।

চীন অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগগুলো বরাবরই অস্বীকার করেছে। উভয় দেশের মধ্যে এই সমস্যাগুলো সম্পূর্ণরূপে সমাধান হয়নি।

২০২০ সালের জানুয়ারিতে উভয় দেশ ‘ফেজ ওয়ান’ চুক্তি স্বাক্ষর করে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর আরও বেশি শুল্ক আরোপ করা থেকে বিরত থাকতে রাজি হয় এবং চীন বেশি মার্কিন পণ্য কেনার প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে চীন সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেনি।

বর্তমানে, চীনের প্রযুক্তি নীতি নিয়ে আবারও নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। এছাড়া, ট্রাম্প চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি নিয়েও উদ্বিগ্ন, যা গত বছর ২৬৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল।

আলোচনা চলাকালীন, বেসেন্ট ও গ্রিয়ার সুইস প্রেসিডেন্ট ক্যারিন কেলার-সুটারের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন। ট্রাম্প সম্প্রতি সুইজারল্যান্ড থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩১ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা স্থগিত করেছেন।

বর্তমানে, এই শুল্ক ১০ শতাংশে নামানো হয়েছে, তবে ভবিষ্যতে এটি আবার বাড়ানো হতে পারে।

সুইস সরকার এ বিষয়ে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। তারা তাদের গুরুত্বপূর্ণ শিল্প, যেমন—ঘড়ি, কফি ক্যাপসুল, পনির ও চকলেটের ওপর এই শুল্কের প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক করেছে।

সুইজারল্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। গত দুই দশকে যুক্তরাষ্ট্র ও সুইজারল্যান্ডের মধ্যে পণ্য ও সেবার বাণিজ্য চারগুণ বেড়েছে।

সুইজারল্যান্ড গত বছর ১লা জানুয়ারি থেকে সব শিল্প পণ্যের ওপর শুল্ক বাতিল করেছে, যার ফলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা ৯৯ শতাংশ পণ্য শুল্কমুক্তভাবে আমদানি করা যায়।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *