চীন-যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক কমানো: কী ঘটলো? এরপর কী?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত, বিশ্ব অর্থনীতিতে এর প্রভাব। যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন তাদের মধ্যকার বাণিজ্য যুদ্ধের তীব্রতা কমাতে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে।

এর ফলে উভয় দেশই একে অপরের পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক (ট্যারিফ) কিছুদিনের জন্য স্থগিত করতে রাজি হয়েছে। এই পদক্ষেপ বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।

খবরটি বাংলাদেশের জন্যেও তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ বিশ্ব বাণিজ্যের এই পরিবর্তন আমাদের অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে।

দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য নিয়ে উত্তেজনা চলছিল। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে এই বিরোধ চরম আকার ধারণ করে।

তিনি চীনের থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করেন। চীনও এর জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক বসায়। এই পরিস্থিতিতে উভয় দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল।

অনেক পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় তা ভোক্তাদের জন্যেও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

এই শুল্ক যুদ্ধের ফলস্বরূপ, চীনের থেকে আসা কিছু পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের পরিমাণ ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছিল।

অন্যদিকে, চীনও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করে। সম্প্রতি, সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় দু’দিনের বাণিজ্য আলোচনার পর উভয় দেশই এই শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এই চুক্তির ফলে, আগামী ৯০ দিনের জন্য উভয় দেশই তাদের পণ্যের ওপরের অতিরিক্ত শুল্ক স্থগিত করবে।

চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্কের হার ১৪৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। অন্যদিকে, চীনও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা পণ্যের শুল্ক ১২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়েছে।

এই সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্বজুড়ে শেয়ার বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে, যা উভয় দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে সহায়তা করবে।

তবে, এই শুল্ক কমানো কেবল একটি সাময়িক পদক্ষেপ। উভয় দেশই জানিয়েছে, তারা বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি বাণিজ্য যুদ্ধের একটি সাময়িক বিরতি। বাণিজ্য সম্পর্ককে দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল করতে হলে আরও অনেক পদক্ষেপ নিতে হবে।

এই চুক্তির কারণ হিসেবে জানা যায়, উভয় দেশই তাদের মধ্যকার বাণিজ্য সম্পর্কের গুরুত্ব বোঝে। তারা একটি টেকসই, দীর্ঘমেয়াদী এবং পারস্পরিক লাভজনক অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়তে চায়।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে চায়। একইসঙ্গে, তারা চীনের কাছ থেকে প্রযুক্তি চুরি এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক অনিয়ম বন্ধ করতেও আগ্রহী।

অন্যদিকে, চীন মনে করে, বাণিজ্য যুদ্ধ কারো জন্য উপকারী নয়।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের এই বাণিজ্য বিরোধের প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও পড়তে পারে। চীন বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার।

চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হলে, আমাদের আমদানি-রপ্তানি এবং সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

তাই, বিশ্ব অর্থনীতির এই পরিবর্তনের দিকে আমাদের বিশেষভাবে নজর রাখতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই চুক্তির ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে, বাণিজ্য যুদ্ধের মূল কারণগুলো এখনো বিদ্যমান।

তাই, ভবিষ্যতে এই পরিস্থিতি আবার পরিবর্তিত হতে পারে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *