যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনায় ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’ হওয়ায় বিশ্ব অর্থনীতিতে আশার আলো দেখা যাচ্ছে। উভয় দেশের মধ্যে শুল্ক আরোপের জেরে সৃষ্ট বাণিজ্য যুদ্ধের অবসানের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
শেয়ার বাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে। রবিবার, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট জানান, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনায় ‘যথেষ্ট উন্নতি’ হয়েছে। এর ফলস্বরূপ, বিনিয়োগকারীরা বাজারের ওপর আস্থা রাখছেন।
ডাউ ফিউচার ১.০৩ শতাংশ, এসঅ্যান্ডপি ৫০০ ফিউচার ১.৩১ শতাংশ এবং টেক-নির্ভর নাসডাক কম্পোজিট ফিউচার ১.৭১ শতাংশ বেড়েছে।
আলোচনায় অংশ নিতে মার্কিন প্রতিনিধি এবং চীনের কর্মকর্তাদের মধ্যে সুইজারল্যান্ডের জেনেভাতে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে, গত মাসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেন, যার জবাবে চীনও পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ১২৫ শতাংশ শুল্ক বসায়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই বাণিজ্য যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিকে দুর্বল করে দিয়েছে। তবে, সাম্প্রতিক আলোচনাগুলো ইঙ্গিত দেয় যে উভয় দেশ একটি বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছাতে পারে, যা বৈশ্বিক অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে সহায়ক হবে।
মার্কিন কর্মকর্তারা সোমবার সকালে একটি বাণিজ্য চুক্তির কাঠামো ঘোষণা করতে পারেন। এর আগে, গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
যদিও ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে শুল্ক সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করা হবে না, তবে আগের তুলনায় শুল্কের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমতে পারে। মার্কিন বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুৎনিক সিএনএনকে জানান, বাণিজ্য আলোচনার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ১০ শতাংশের কম শুল্কের হার রাখতে রাজি নয়।
যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিতেও ১০ শতাংশ শুল্কের হার বহাল রাখা হয়েছে, যা সম্ভবত ‘ভবিষ্যতেও’ একই থাকবে।
এই বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে ভোক্তাদের মধ্যে আস্থা কমেছে এবং দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি) কমেছে। এমনকি, কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, শুল্কের কারণে চলতি বছরের শেষ নাগাদ মূল্যস্ফীতি দ্বিগুণ হতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা কমা নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক দিক। তবে, এর বাস্তব প্রভাব এখনো দেখা যায়নি। চীনের জাহাজগুলো বর্তমানে মার্কিন বন্দরে প্রবেশ করলে, তাদের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে।
লস অ্যাঞ্জেলেস বন্দরের নির্বাহী পরিচালক জেনে সেরোকা জানান, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের পর চীন থেকে আমদানি ৫০ শতাংশের বেশি কমেছে।
এই পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কিছু প্রভাব পড়তে পারে। উদাহরণস্বরূপ, চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের দাম বাড়তে পারে, যা বাংলাদেশের বাজারেও প্রভাব ফেলবে। তবে, এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য, বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হতে পারে।
এই বাণিজ্য চুক্তির ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আসলে, তা বাংলাদেশের বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের জন্য ইতিবাচক হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন