মার্কিন-চীন বাণিজ্য যুদ্ধ: ট্রাম্প-এর বৈঠকের আগে কী?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক আবারও আলোচনার টেবিলে উঠেছে। আসন্ন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও শি জিনপিং-এর মধ্যে শীর্ষ বৈঠকের আগে দুই দেশের মধ্যেকার বাণিজ্য বিরোধ নিরসনে মালয়েশিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। উভয় দেশই তাদের মধ্যকার তিক্ততা কমাতে চাইছে, যেখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে।

মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য এই আলোচনায় মার্কিন প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট এবং বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার। চীনের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেবেন ভাইস প্রিমিয়ার হে লিফেং। ধারণা করা হচ্ছে, এই আলোচনার ফলাফল কোরিয়ার দক্ষিণে অনুষ্ঠেয় ট্রাম্প-শি বৈঠকের পথ খুলে দেবে।

বাণিজ্যিক আলোচনা এই মুহূর্তে বেশ জটিল পরিস্থিতিতে এসে দাঁড়িয়েছে। দুই দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রযুক্তি এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ (rare earths)-এর উপর বিধিনিষেধ আরোপ। চীন বিশ্ব বাজারের প্রায় ৯০ শতাংশ বিরল মৃত্তিকা খনিজ সরবরাহ করে থাকে, যা ইলেকট্রনিকস, অটোমোবাইল এবং সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের এই পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ হয়ে দেশটির পণ্যের উপর অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। এমনকি তিনি চীনের উপর প্রযুক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রেও নিয়ন্ত্রণ আরোপের কথা ভাবছেন। কোনো কোনো সময় তিনি আসন্ন বৈঠক বাতিল করারও ইঙ্গিত দিয়েছেন।

আলোচনায় প্রযুক্তি, বিরল মৃত্তিকা এবং শুল্কের মতো বিষয়গুলো প্রধান উদ্বেগের কারণ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বৈঠকের আগে স্কট বেসেন্ট সংবাদ মাধ্যমকে জানান, তিনি আলোচনা ফলপ্রসূ হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। তবে চীনের বিরল মৃত্তিকা খনিজ নীতির পরিবর্তন না হলে, যুক্তরাষ্ট্র আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে। তিনি আরও বলেন, “আমরা আশা করছি, এই সপ্তাহান্তে বিষয়গুলো সুরাহা করা যাবে, যাতে নেতারা ইতিবাচক পরিবেশে আলোচনা শুরু করতে পারেন।”

যুক্তরাষ্ট্র সরকার ল্যাপটপ থেকে শুরু করে জেট ইঞ্জিন পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার রপ্তানির উপর বিধিনিষেধ আরোপের কথা বিবেচনা করছে বলে জানা গেছে। এই বিষয়ে বেসেন্ট বলেন, “সবকিছুই আলোচনার টেবিলে রয়েছে।” তিনি আরও জানান, এই ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করা হলে, তা সম্ভবত জি-৭ মিত্রদের সঙ্গে সমন্বয় করে করা হবে।

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, উভয় পক্ষ “গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো” নিয়ে আলোচনা করবে। তবে তারা বিস্তারিত কিছু জানায়নি।

ট্রাম্প ও শি জিনপিং-এর মধ্যে সর্বশেষ আলোচনা হয়েছিল সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে। সেসময় বাণিজ্য, মাদক এবং ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা হয়।

চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনটাও সম্প্রতি উভয় দেশের মধ্যে “সহাবস্থানের সঠিক পথ খুঁজে বের করার” উপর জোর দেন। তিনি আরও বলেন, চীন “বিচ্ছিন্নতা”র বিরোধিতা করে আসছে।

বিশ্লেষকদের মতে, দুই দেশের মধ্যেকার আলোচনা অনেক দূর এগিয়েছে, তবে এখনো অনেক বিষয়ে মতানৈক্য বিদ্যমান। এপ্রিল মাসে উভয় দেশের মধ্যে শুল্কের মাত্রা বেড়েছিল, যা উভয় দেশের বাণিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

মে মাসে জেনেভায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে মার্কিন প্রতিনিধি এবং চীনের প্রতিনিধিদের মধ্যে একটি বাণিজ্য চুক্তি হয়। এরপর লন্ডন ও স্টকহোমেও বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনা চলাকালীন সময়ে একবার মার্কিন প্রতিনিধি দলের প্রধান, চীনা প্রতিনিধির বিরুদ্ধে “অসদাচরণ”-এর অভিযোগ এনেছিলেন।

আসন্ন মালয়েশিয়া বৈঠকের আলোচ্য বিষয়গুলো ট্রাম্প ও শি-এর মধ্যেকার শীর্ষ সম্মেলনেও আলোচনা করা হবে। ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন, তিনি আশা করছেন বিরল মৃত্তিকা খনিজ, সয়াবিন এবং ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে একটি সমাধানে পৌঁছানো যাবে।

ট্রাম্প শুক্রবার এশিয়া সফরের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। তিনি মালয়েশিয়া, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় যাবেন।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *