মার্কিন-চীন: শেষ পর্যন্ত কি বাণিজ্য যুদ্ধ?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ ক্রমশ ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে, যা বিশ্ব অর্থনীতিকে আরও গভীর সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। দেশ দুটির মধ্যে পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের ফলে ইতোমধ্যে বিশ্বজুড়ে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে, যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বিভিন্ন দেশের বাজারে।

বাংলাদেশের অর্থনীতিও এই বাণিজ্যযুদ্ধের আঁচ থেকে মুক্ত নয়। গত কয়েক সপ্তাহে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে নতুন করে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন।

এর প্রতিক্রিয়ায় চীনও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করেছে। এর ফলস্বরূপ, বিশ্ব বাজারের বিনিয়োগকারীরা তাদের অর্থ তুলে নিতে শুরু করেছে, যা শেয়ার বাজারে বড় ধরনের দরপতনের কারণ হয়েছে।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, উভয় দেশই তাদের অবস্থানে অনড় থাকার ইঙ্গিত দিয়েছে, যা বাণিজ্যযুদ্ধকে আরও তীব্র করে তুলতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চীন যদি তাদের বাণিজ্য নীতি পরিবর্তন না করে, তবে তারা চীনের আমদানি পণ্যের ওপর আরও বেশি শুল্ক আরোপ করবে। অন্যদিকে, চীনও পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।

তারা জানিয়েছে, নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় তারা শেষ পর্যন্ত লড়াই করতে প্রস্তুত। এই বাণিজ্যযুদ্ধের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি।

বিশেষ করে, এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ওপর। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি কমে যেতে পারে।

বাংলাদেশের অর্থনীতি একটি উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশ এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল। তাই, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যেকার এই বাণিজ্যযুদ্ধ বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ।

কারণ, এর ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, তৈরি পোশাক, যা বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য, তার বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

এছাড়াও, আমদানি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশের বাজারেও মূল্যস্ফীতি দেখা দিতে পারে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে।

বাণিজ্য সম্পর্ক বজায় রাখতে এবং নতুন বাজার অনুসন্ধানে জোর দিতে হবে। একই সাথে, বিশ্ব অর্থনীতির এই অস্থির পরিস্থিতিতে দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোকে পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের বৈদেশিক বিনিয়োগেও প্রভাব পড়তে পারে।

তাই, দেশের অর্থনীতির উপর এই যুদ্ধের সম্ভাব্য প্রভাব মোকাবিলায় একটি সুচিন্তিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। তথ্যসূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *