মার্কিন-চীন বাণিজ্য যুদ্ধ: প্রথম ধাক্কাটা কে খেল?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে শুল্ক যুদ্ধ কি অবশেষে থামতে চলেছে? দুই পরাশক্তির মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা প্রশমনে একটি চুক্তিতে পৌঁছানো গেছে, যার ফলে উভয় দেশই একে অপরের উপর আরোপিত কিছু শুল্ক কমাতে রাজি হয়েছে।

এই চুক্তির ফলে আগামী ৯০ দিনের জন্য শুল্কের বোঝা কিছুটা কমবে, যা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি স্বস্তিদায়ক খবর।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যেকার এই বাণিজ্য যুদ্ধ মূলত শুরু হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে। তিনি চীনের উপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেন, যা পরবর্তীতে দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের দিকে মোড় নেয়।

এর ফলস্বরূপ, উভয় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

নতুন চুক্তিতে উভয় দেশই তাদের পণ্যের উপর ধার্য করা শুল্ক উল্লেখযোগ্য হারে কমাতে সম্মত হয়েছে। এর ফলে, চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসা পণ্যের উপর শুল্ক হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩০ শতাংশে, যেখানে আগে তা ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত ছিল।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনে যাওয়া পণ্যের শুল্কও হ্রাস করা হয়েছে, যা এখন ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এই চুক্তির ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে, বিশেষ করে শেয়ার বাজারে।

তবে, এই চুক্তির মূল বিষয় হলো, কে প্রথম নমনীয় হলো? বাণিজ্য বিশ্লেষকদের মতে, এই চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় চীন বেশি সুবিধা লাভ করেছে।

কারণ, বর্তমানে আমেরিকার অর্থনীতি চীনের উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। এছাড়া, অতীতেও চীন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি সম্পূর্ণভাবে কার্যকর করতে ব্যর্থ হয়েছে, যা এই চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন তৈরি করে।

এই বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও কিছু প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চীন বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বাণিজ্য সহযোগী এবং যুক্তরাষ্ট্রও একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার।

তাই, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক স্থিতিশীল হলে, তা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সহায়তা করবে। বিশেষ করে, পোশাক শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে চীনের উপর নির্ভরশীলতা এবং যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্ক হ্রাসের বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই চুক্তির ফলে হয়তো দীর্ঘমেয়াদে দুই দেশের মধ্যেকার বাণিজ্য সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আসবে।

তবে, এই চুক্তির কার্যকারিতা এবং এর ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। আগামী ৯০ দিনের মধ্যে উভয় দেশ তাদের বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা করবে এবং ভবিষ্যতে শুল্কের হার কেমন হবে, তা সেই আলোচনার উপর নির্ভর করবে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *