মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন নীতির কড়া রূপ নেওয়ার ফলে, দেশটির নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও শিশুদের হন্ডুরাসে ফেরত পাঠানোর ঘটনা বাড়ছে। এই ঘটনার জেরে অভিবাসন আইন নিয়ে কাজ করা আইনজীবীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তারা বলছেন, শিশুদের তাদের মায়ের সঙ্গে জোর করে ফেরত পাঠানো হচ্ছে, যা মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন।
সম্প্রতি, ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে গৃহীত একটি নীতির কারণে, কয়েকজন মার্কিন নাগরিক শিশুকে হন্ডুরাসে তাদের মায়ের সঙ্গে ফেরত পাঠানো হয়েছে। জানা গেছে, এই শিশুদের মায়েরা হয়তো অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিলেন।
কিন্তু শিশুদের জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব রয়েছে। এই শিশুদের হন্ডুরাসে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াটি দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করা হয়েছে, যেখানে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
আইনজীবীরা বলছেন, মার্কিন অভিবাসন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই)-এর নিজস্ব নীতি রয়েছে, যেখানে এ ধরনের পরিস্থিতিতে শিশুদের অধিকার রক্ষার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু দ্রুত বিতাড়নের কারণে সেই নীতিগুলো লঙ্ঘিত হচ্ছে।
এই নীতির মূল উদ্দেশ্য হল, কোনো অভিবাসী মায়ের বিরুদ্ধে বিতাড়নের আদেশ থাকলে, তার সন্তানদের ভবিষ্যৎ এবং তাদের অধিকারের বিষয়টি বিবেচনা করা।
যুক্তরাষ্ট্রের বিচারক টেরী ডফটি এক মামলার শুনানিতে শিশুদের দ্রুত বিতাড়ন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, কোনো মার্কিন নাগরিককে বিতাড়ন করা বেআইনি এবং অসাংবিধানিক।
বিচারক শিশুদের মায়ের ইচ্ছার বিষয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি জানতে চান, মায়েরা কি সত্যিই তাদের সন্তানদের সঙ্গে হন্ডুরাসে যেতে চেয়েছিলেন?
আদালতের নথি অনুযায়ী, বিতাড়নের আগে শিশুদের মায়ের সঙ্গে তাদের বাবার ফোনে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল। কিন্তু আইসিই কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে সেই কথা শেষ হয়ে যায়, কারণ তারা আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগের বিস্তারিত তথ্য দিতে পারেননি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের পরিস্থিতিতে মায়েরা সাধারণত কয়েকটি বিকল্পের মুখোমুখি হন। তারা হয়তো সন্তানের সঙ্গে থাকতে পারেন, সেক্ষেত্রে অন্য অভিভাবকের সম্মতি প্রয়োজন হবে।
অথবা, তারা সন্তানকে অন্য কোনো আত্মীয় বা বন্ধুর কাছে রেখে যেতে পারেন। এমনকি, তারা শিশু সুরক্ষা পরিষেবা কর্তৃপক্ষের সাহায্যও চাইতে পারেন। কিন্তু দ্রুত বিতাড়নের কারণে মায়েদের হাতে খুব কম সময় থাকে।
ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা অবশ্য দাবি করেছেন, মায়েরা তাদের সন্তানদের সঙ্গে নিতে চেয়েছিলেন। তারা আরও বলছেন, পরিবারগুলোকে একত্র রাখার জন্যই এমনটা করা হয়েছে।
তবে আইনজীবীরা বলছেন, শিশুদের তাদের মায়ের সঙ্গে ফেরত পাঠানো শিশুদের অধিকারের পরিপন্থী।
এই ঘটনাগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতির একটি কঠিন চিত্র তুলে ধরে। যেখানে একদিকে যেমন অবৈধ অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে, তেমনই অন্যদিকে শিশুদের অধিকার এবং পরিবারের সদস্যদের মধ্যেকার সম্পর্ক রক্ষার বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্য সূত্র: সিএনএন