দীর্ঘ ও সুস্থ জীবন লাভের আকাঙ্ক্ষা মানুষের চিরন্তন। সম্প্রতি, জীবনযাত্রার গুণাগুণ বিচার করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শহরগুলোর মধ্যে দীর্ঘায়ুর জন্য সেরা স্থান নির্বাচন করা হয়েছে।
গবেষণা সংস্থা বেস্টপ্লেস এবং চিকিৎসা প্রযুক্তি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান মেডট্রনিকের যৌথ উদ্যোগে করা এক সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, দীর্ঘ জীবন লাভের ক্ষেত্রে কেবল আধুনিক প্রযুক্তি বা স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসই যথেষ্ট নয়, বরং একটি উপযুক্ত স্থানে বসবাস করাটাও জরুরি।
স্বাস্থ্য এবং জীবনযাত্রার মানদণ্ড বিশ্লেষণের মাধ্যমে, কোন শহরে দীর্ঘকাল সুস্থ জীবন যাপন করা সম্ভব, তা খুঁজে বের করাই ছিল এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য।
গবেষণাটি পরিচালনা করতে গিয়ে, গবেষকরা স্বাস্থ্য, বয়স, জেনেটিক্স, সামাজিক সম্পর্ক এবং সামগ্রিক সুস্থতার মতো বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।
তাঁরা দেখেছেন, লিঙ্গ, শক্তিশালী সামাজিক বন্ধন, পরিবার, স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম, ধর্মীয় অনুশাসন, নাগরিক সক্রিয়তা এবং সামাজিক সংগঠনগুলো মানুষের জীবনযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।
এছাড়াও, স্বাস্থ্যসেবা, উন্নত বায়ু quality এবং শিক্ষার সুযোগও দীর্ঘায়ুর ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সহায়ক।
এই মানদণ্ডগুলোর ভিত্তিতে, যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম ১০০টি শহরের মধ্যে একটি তালিকা তৈরি করা হয়।
এতে ওয়াশিংটন, ডি.সি.-কে শীর্ষ স্থান দেওয়া হয়েছে।
ডি.সি.-র বাসিন্দাদের সামাজিক সম্পর্ক বেশ ভালো, এবং তারা সুস্থ জীবনযাপনের প্রতিও বেশ মনোযোগী।
এখানে মানুষের মধ্যে শারীরিক কার্যকলাপের প্রবণতা বেশি, ধূমপান ও মদ্যপানের হারও তুলনামূলকভাবে কম।
তবে, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের ক্ষেত্রে শহরটি কিছুটা পিছিয়ে আছে।
দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সান ফ্রান্সিসকো বে এলাকা।
এখানে উন্নত মানের স্বাস্থ্যসেবা, শারীরিক সক্রিয়তা এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের সুযোগ বিদ্যমান।
তবে, দ্রুতগতির কর্মসংস্কৃতির কারণে এখানকার সামাজিক সম্পর্ক কিছুটা দুর্বল, যা তাদের শীর্ষ স্থান থেকে বঞ্চিত করেছে।
তালিকায় তৃতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম স্থানে রয়েছে যথাক্রমে ব্রিজপোর্ট (কানেকটিকাট), বোস্টন এবং সিয়াটল।
এই ফলাফল থেকে বোঝা যায়, দীর্ঘায়ুর জন্য উপযুক্ত স্থানগুলো কেবল একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে সীমাবদ্ধ নয়।
গবেষণায় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে।
সেটি হলো, যারা ১৫০ বছর পর্যন্ত বাঁচবেন, তাদের মধ্যে সম্ভবত নারীর সংখ্যাই বেশি হবে।
কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের সুপার-সেন্টেনিয়ানদের (১০০ বছরের বেশি বয়সী) তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তাদের মধ্যে মাত্র ৭ শতাংশ পুরুষ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের দীর্ঘায়ুর ক্ষেত্রে জেনেটিক্স এবং পরিবেশ—উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
পরিবারে দীর্ঘায়ুর ইতিহাস থাকলে, সেই ব্যক্তির বেশি দিন বাঁচার সম্ভাবনা থাকে।
তবে, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য সহায়ক পরিবেশও প্রয়োজন।
যেখানে সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং শক্তিশালী সামাজিক সম্পর্ক—এগুলো মানুষকে দীর্ঘ ও সুস্থ জীবন দিতে সহায়তা করে।
এই গবেষণা থেকে আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা নিতে পারি।
সেটি হলো, দীর্ঘ ও সুস্থ জীবনের জন্য প্রয়োজন সঠিক জীবনযাত্রা, সামাজিক সমর্থন এবং একটি উপযুক্ত পরিবেশ।
আমাদের দেশেও, স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে দীর্ঘ ও সুস্থ জীবন লাভ করা সম্ভব।
তথ্য সূত্র: ট্র্যাভেল অ্যান্ড লেজার