মার্কিন কয়লা শিল্প: ট্রাম্পের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে কি বদলাবে ভাগ্য?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কয়লা শিল্পের ভবিষ্যৎ এবং ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি পরিবর্তন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কয়লা শিল্প এক কঠিন সময় পার করছে। একসময় দেশটির বিদ্যুতের অর্ধেকের বেশি আসত কয়লা থেকে, কিন্তু নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার বাড়ায় কয়লার চাহিদা কমেছে উল্লেখযোগ্যভাবে।

এই পরিস্থিতিতে, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন কয়লা শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে বেশ কিছু নীতিগত পরিবর্তন এনেছিল।

ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর ফেডারেল জমিতে খনিজ উত্তোলনের অনুমতি দেন। এছাড়া, পুরাতন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো, যেগুলো বন্ধ হওয়ার কথা ছিল, সেগুলোকে চালু রাখার জন্য জরুরি ক্ষমতা ব্যবহার করেন, যাতে করে ডেটা সেন্টার, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং বৈদ্যুতিক গাড়ির ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানো যায়।

পুরনো বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে ক্ষতিকর রাসায়নিক নির্গমন সীমিত করার ফেডারেল নিয়ম থেকে অব্যাহতিও দেওয়া হয়।

তবে কয়লা শিল্পের এই সংকট বহু দশকের পুরনো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শক্তি তথ্য প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালে যেখানে এক বিলিয়ন টন কয়লা উৎপাদিত হয়েছিল, সেখানে ২০২৩ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫৭৮ মিলিয়ন টনে।

কয়লা শিল্পের পতনের পাশাপাশি কর্মসংস্থানও কমেছে। ১৯২০-এর দশকে প্রায় ৯ লক্ষ শ্রমিক কয়লাখনিতে কাজ করতেন। বর্তমানে সেই সংখ্যা অনেক কমে এসেছে।

যদিও ২০২০ সালের করোনা মহামারীর পর, ২০২২ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে কয়লা শিল্পে কর্মসংস্থান সামান্য বেড়েছে। বর্তমানে প্রায় ৪৫,৪৭৬ জন শ্রমিক এই শিল্পে কাজ করেন।

এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক কাজ করেন ওয়েস্ট ভার্জিনিয়াতে (১৪,০০০), এরপর কেন্টাকিতে (৫,০০০)।

নিরাপত্তার দিক থেকেও কয়লা শিল্পে পরিবর্তন এসেছে। খনি শ্রমিকদের নিরাপত্তা বিধানে মাইন সেফটি অ্যান্ড হেলথ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এমএসএইচএ) নামে একটি সংস্থা কাজ করে। গত চার দশকে খনি দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।

এমএসএইচএ-এর তথ্য অনুসারে, বিগত পাঁচ বছরে প্রতি বছর ১১ জন বা তার কম শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের সময় এমএসএইচএ-এর বেশ কয়েকটি অফিস বন্ধ করার প্রস্তাব করা হয়েছিল। এই পদক্ষেপের ফলে, কর্তৃপক্ষের জন্য খনি পরিদর্শন করা কঠিন হয়ে পড়বে বলে অনেকে মনে করেন।

এই প্রস্তাবের ফলে বছরে প্রায় ১৮ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হওয়ার কথা ছিল।

কয়লার ভবিষ্যৎ ব্যবহারের বিষয়েও কিছু সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। কাননসবার্গ-ভিত্তিক কোর ন্যাচারাল রিসোর্সেস-এর মতো কিছু কোম্পানি ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার কয়লা ব্যবহার করে লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির জন্য উপাদান তৈরি করার চেষ্টা করছে।

এছাড়াও, কয়লা থেকে কার্বন ফোম তৈরি করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা শিল্পের জন্য বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরি করা হচ্ছে।

কয়লা শিল্পের এই পরিবর্তনগুলো একদিকে যেমন এই শিল্পের টিকে থাকার লড়াই, তেমনি অন্যদিকে পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কয়লার ব্যবহার কমানো এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির দিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরি।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *