যুক্তরাষ্ট্রে ভোক্তাদের মধ্যে অর্থনৈতিক আস্থা দ্রুত কমছে, যা দেশটির ইতিহাসে অন্যতম দুর্বল অবস্থানে পৌঁছেছে। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক জরিপ অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে ভোক্তাদের আস্থা সূচক ১১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৫০.৮।
এই হিসেব ১৯৫২ সাল থেকে নেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে এবং এটি দেশটির অর্থনীতির জন্য একটি অশনি সংকেত। এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আসতে পারে, যা আমাদের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির এই দুর্বলতার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে বাণিজ্য যুদ্ধ এবং মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা। দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেওয়া বাণিজ্য নীতি, বিশেষ করে বিভিন্ন পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের কারণে আমেরিকানদের মধ্যে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বেড়েছে।
এর ফলে জিনিসপত্রের দাম বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যা ভোক্তাদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। এই বাণিজ্য যুদ্ধ এবং শুল্ক নীতি বিশ্ব অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের কারণ।
ভোক্তাদের আস্থা কমে যাওয়ার সরাসরি প্রভাব পড়ে তাদের ব্যয়ের ওপর। যখন মানুষ ভবিষ্যতের ব্যাপারে সন্দিহান থাকে, তখন তারা খরচ করা কমিয়ে দেয়। এতে বাজারের চাহিদা কমে যায় এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
যদিও বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সরাসরি এর প্রভাব খুব বেশি দেখা যাচ্ছে না, তবে এমনটা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক বা ফেডারেল রিজার্ভ (যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক)-এর কর্মকর্তারাও এই বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।
তারা দেখছেন, কীভাবে ভোক্তাদের এই মানসিকতা তাদের ব্যয়ের ধারণাকে প্রভাবিত করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই অর্থনৈতিক মন্দা বিশ্ব অর্থনীতিতে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নীতির পরিবর্তন বিশ্ব বাণিজ্যের গতিপথ পরিবর্তন করে।
উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে যদি কোনো পণ্যের চাহিদা কমে যায়, তবে সেই পণ্যের রপ্তানিকারক দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বাংলাদেশের পোশাকশিল্প, যা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পণ্য রপ্তানি করে, তাদের জন্য এটি একটি উদ্বেগের বিষয়।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মূল্যস্ফীতি। ভোক্তারা যদি মনে করেন যে জিনিসপত্রের দাম ভবিষ্যতে আরও বাড়বে, তাহলে তারা এখনই বেশি খরচ করতে চাইবে। এতে বাজারে চাহিদা বেড়ে গিয়ে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এমনটা হলে, বিশ্ববাজারেও এর প্রভাব পড়তে পারে, যা আমদানি নির্ভর দেশগুলোর জন্য সমস্যা তৈরি করবে।
ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। সাধারণত সুদের হার বৃদ্ধি বা বাজারের তারল্য কমানোর মাধ্যমে তারা এটি করে থাকে। কিন্তু ভোক্তাদের মধ্যে যদি মূল্যস্ফীতি নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী উদ্বেগ থাকে, তাহলে এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য একটি সতর্কবার্তা। আমাদের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে হলে, বিশ্ব অর্থনীতির গতিপ্রকৃতির দিকে নজর রাখতে হবে এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ করে, রপ্তানি বাজার এবং আমদানি ব্যয়ের ওপর নজর রাখা জরুরি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন