মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভোক্তাদের মধ্যে অর্থনৈতিক আস্থা কমে যাওয়ায় দেশটির অর্থনীতি নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এপ্রিল মাসে ভোক্তাদের আস্থা সূচক ৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৫২.২-এ।
যা ১৯৫২ সাল থেকে রেকর্ডকৃত চতুর্থ সর্বনিম্ন। ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগান এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে মার্কিন অর্থনীতিতে মন্দা এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি এবং শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের কারণে অনেক দিন ধরেই অনিশ্চয়তা বিরাজ করছিল, যা এখন উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক দুশ্চিন্তা বাড়ছে। বিভিন্ন বয়স, শিক্ষা, আয় এবং রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষের মধ্যেও এই উদ্বেগের চিত্র দেখা যাচ্ছে।
ভোক্তারা অর্থনীতির বিভিন্ন দিকে ঝুঁকি দেখছেন, যার প্রধান কারণ বাণিজ্য নীতি নিয়ে চলমান অনিশ্চয়তা এবং ভবিষ্যতে মূল্যস্ফীতি আবারও বাড়তে পারে এমন আশঙ্কা।
শেয়ার বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। খবর প্রকাশের পর শেয়ার বাজার কিছুটা নিম্নমুখী হয়।
বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগের ব্যাপারে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন। ডাউ জোনস সূচক ২০০ পয়েন্ট কমে যায়, এস অ্যান্ড পি ৫০০ সূচক ০.১৫ শতাংশ কমে এবং নাসডাক কম্পোজিট ০.১ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
ভোক্তা ব্যয়ের ওপর মার্কিন অর্থনীতির অনেকখানি নির্ভর করে। যদি ভোক্তারা তাদের ব্যয় কমাতে শুরু করেন, তবে তা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে দুর্বল করে দেবে, এমনকী মন্দা দেখা দিতে পারে।
যদিও অতীতে দেখা গেছে, যখন মূল্যস্ফীতি বেড়েছিল, তখনও ভোক্তারা খরচ করা চালিয়ে গেছেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি ভিন্ন।
বর্তমানে চাকরির বাজার আগের মতো শক্তিশালী নয়, এবং ভোক্তাদের সঞ্চয়ও কমে এসেছে। এছাড়া, শিক্ষার্থীদের ঋণ পরিশোধের বিষয়টিও নতুন করে শুরু হয়েছে।
ফেডারেল রিজার্ভ বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে। ফেডারেল রিজার্ভের কর্মকর্তারা বলছেন, ট্রাম্পের শুল্ক নীতি মূল্যস্ফীতি বাড়াতে পারে, তবে এর প্রভাব কত দিন স্থায়ী হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
তারা পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।
ভোক্তাদের মূল্যবৃদ্ধি সম্পর্কে ধারণা এবং প্রত্যাশা অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, মানুষ যদি মনে করে যে মূল্যস্ফীতি বাড়বে, তবে তারা সে অনুযায়ী তাদের খরচ কমিয়ে দিতে পারে।
এপ্রিল মাসের ভোক্তা আস্থা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, আগামী এক বছরে মূল্যস্ফীতির হার সামান্য কমবে, এমন ধারণা করা হলেও, তা ১৯৮১ সালের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে।
মার্কিন অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ট্রাম্পের নীতির কারণে অর্থনীতির প্রকৃত চিত্র বোঝা কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে তারা সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন।
ফেডারেল রিজার্ভের গভর্নর আদ্রিয়ানা কুগলার বলেছেন, নীতি নির্ধারকদের জন্য বাজারের পরিস্থিতি, জরিপ এবং বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে অর্থনীতির অবস্থা সম্পর্কে ধারণা নেওয়া জরুরি।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মার্কিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে এই তথ্য জানা গেছে।