আতঙ্কে কেনাকাটা! শুল্কের আগেই জিনিস কিনতে ছুটছে মার্কিনীরা!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কের জেরে জিনিসপত্রের দাম বাড়ার আশঙ্কায়, কেনাকাটার হিড়িক

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সম্প্রতি আমদানি শুল্ক (tariffs) বৃদ্ধির ঘোষণার পর, সেখানকার ক্রেতাদের মধ্যে জরুরি ভিত্তিতে জিনিসপত্র কেনার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে, কম্পিউটার, গাড়ি সহ বিভিন্ন দামি পণ্যের (big-ticket items) ক্ষেত্রে এই প্রবণতা চোখে পড়ছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুল্কের কারণে পণ্যের দাম বাড়তে পারে, এই উদ্বেগে ভোক্তারা দ্রুত কেনাকাটা করছেন।

টেক্সাসের অস্টিনের বাসিন্দা জন গুটেরেজ এক বছর ধরে একটি নতুন ল্যাপটপ কেনার কথা ভাবছিলেন। ছবি তোলার কাজ করার জন্য তার দ্রুতগতির এবং বেশি স্টোরেজযুক্ত একটি কম্পিউটারের প্রয়োজন ছিল।

তিনি তাইওয়ানের একটি ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ পছন্দ করেছিলেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাইওয়ান থেকে আমদানি পণ্যের উপর নতুন করে ৩২ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পরেই গুটেরেজ দ্রুত ব্যবস্থা নেন।

তিনি জানান, ওই ঘোষণার দিনই তিনি নিউইয়র্কের একটি খুচরা বিক্রেতার কাছ থেকে ২,৪০০ ডলারের ল্যাপটপটি কিনে ফেলেন। গুটেরেজের মতে, “আমি ঝুঁকি না নিয়ে এখনই কিনে ফেললাম। তাহলে শুল্কের চিন্তা ছাড়াই আমি লেটেস্ট প্রযুক্তির ল্যাপটপটা পাবো।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই শুল্কের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামও বাড়তে পারে, যা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতে কিছুটা হলেও বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই শুল্কের মূল উদ্দেশ্য হলো অন্যান্য দেশগুলোকে তাদের অর্থনীতিকে আরো উন্মুক্ত করতে উৎসাহিত করা, যাতে তারা যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বেশি পরিমাণে আমদানি করে।

এর ফলে আলোচনা শুরু হতে পারে এবং শুল্ক কমানোও সম্ভব হতে পারে, অথবা কোম্পানিগুলো যুক্তরাষ্ট্রে তাদের উৎপাদন বাড়াতে পারে, যাতে তাদের আমদানি শুল্কের বোঝা কম হয়।

ভার্জিনিয়ার আর্লিংটনের বাসিন্দা রব ব্ল্যাকওয়েল ও তার স্ত্রী তাদের ছেলের কলেজে আসা-যাওয়ার জন্য একটি নতুন গাড়ির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছিলেন।

তাদের পুরনো ইলেকট্রিক গাড়িটির ব্যাটারি দুর্বল হয়ে আসছিল, এবং খুব শীঘ্রই সেটি তাদের মেয়ের ব্যবহারের জন্য দিতে হবে।

ব্ল্যাকওয়েল জানান, “আমি আমার স্ত্রীকে অনেক দিন ধরেই বলছিলাম যে আমাদের একটা নতুন গাড়ি কিনতে হবে, এবং আমি দেখছিলাম প্রেসিডেন্ট শুল্কের বিষয়ে কী করেন।” তিনি একটি নতুন ইলেকট্রিক গাড়ি (EV) নিতে চেয়েছিলেন।

কিন্তু প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তনের কারণে তিনি লিজ নেওয়ার কথা ভাবছিলেন। তিনি জেনারেল মোটরসের তৈরি করা ‘অপটিক’ মডেলটি পছন্দ করেছিলেন, যা তৈরি হয় মেক্সিকোতে।

শুল্কের কারণে এর দামও বাড়তে পারে।

শুল্কের ঘোষণার পর তারা দ্রুত গাড়ি লিজ নেওয়ার পরিকল্পনা করেন। ব্ল্যাকওয়েল জানান, ডিলারশিপটি শুল্ক চূড়ান্ত হওয়ার আগেই তাদের সঙ্গে করা চুক্তিটি বহাল রেখেছে।

তিনি আরও বলেন, “ডিলাররা জানে, আমাদের মতোই তাদেরও ধারণা ছিল যে এখন বাজার ক্রেতাদের দিকে ঝুঁকেছে।

ক্যালিফোর্নিয়ার বারব্যাঙ্কের মার্কেটিং ও কৌশল বিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, লি ওচনারও একটি নতুন গাড়ির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছিলেন। অফিসের মিটিংগুলোতে ব্যবহারের জন্য তিনি একটি ভালো গাড়ির খোঁজ করছিলেন।

কিন্তু ব্যস্ততার কারণে কেনা হয়ে উঠছিল না। তিনি জানান, “আমার কার ব্রোকারকে ২৭শে মার্চ, বৃহস্পতিবার বললাম, ‘আমার দ্রুত একটা গাড়ি দরকার, রবিবার এর মধ্যে এটা হয়ে যেতে হবে।’” ব্রোকার তাকে কিছু গাড়ির বিকল্প এবং দামের প্রস্তাব দেন।

রবিবারই তিনি একটি অডি কিউ-থ্রি (Audi Q3) লিজ নেন, যা ডিলারশিপ তার বাড়িতে পৌঁছে দেয়। হিসাব করে দেখা গেছে, শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগে গাড়িটি লিজ নেওয়ায় তিনি প্রায় ৪,৩০০ ডলার সাশ্রয় করেছেন।

ওচনার মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বাজারের উপর থেকে আস্থা কমে গেছে, তাই দাম আরও বাড়তে পারে।

তিনি বলেন, “নতুন গাড়ি কেনার প্রয়োজন হলে, শুল্কের আগের অফারটি এখনো পাওয়া গেলে, কিনে ফেলুন। কারণ আগামী সপ্তাহে কী হবে, তা কেউ জানে না।

আন্তর্জাতিক বাজারে শুল্কের এই প্রভাব বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

কারণ, আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির ফলে আমাদের দেশেও বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়তে পারে, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

তাই, বিশ্ব অর্থনীতির এই পরিবর্তনের দিকে আমাদের বিশেষভাবে নজর রাখতে হবে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *