ফিলিস্তিনের অধিকার কর্মী মাহমুদ খলিলের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালতের গুরুত্বপূর্ণ রায় এসেছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের করা তার বিতাড়নের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে আদালত।
জানা যায়, মাহমুদ খলিল একজন আইনজীবী এবং কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। গত বছর গাজায় ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে হওয়া বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার কারণে তাকে আটকের পর বিতাড়নের চেষ্টা করা হচ্ছিল। বুধবার বিচারক জ্যাসি ফারম্যান এই বিষয়ে রায় দেন।
আদালতে খলিলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাকে আটক ও বিতাড়নের চেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের মৌলিক অধিকার, বিশেষ করে বাকস্বাধীনতা এবং ন্যায়বিচার লঙ্ঘনের শামিল। বিচারক ফারম্যান তার রায়ে উল্লেখ করেন, “এই অভিযোগগুলো খুবই গুরুতর এবং এর যথাযথ বিচার হওয়া প্রয়োজন। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে সকল মানুষের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।
আদালত এই মামলাটিকে একটি “ব্যতিক্রমী” ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেছে। তবে, নিউইয়র্কের আদালত এই মামলার বিচার করতে পারবে না জানিয়ে এটিকে নিউ জার্সিতে স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। যেখান থেকে খলিলের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই শুরু হয়েছিল, সেই সময়ে তিনি নিউ জার্সিতে আটক ছিলেন।
সরকার চেয়েছিল মামলাটি রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠ অঙ্গরাজ্য লুইজিয়ানায় সরিয়ে নিতে। বর্তমানে খলিলকে একটি ইমিগ্রেশন ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়েছে।
বিচারক ফারম্যান জানিয়েছেন, মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত খলিলকে বিতাড়িত করা যাবে না। তবে, জামিনের বিষয়ে তিনি কোনো রায় দেননি এবং বিষয়টি নিউ জার্সির আদালতের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন।
আদালত দ্রুততার সঙ্গে মামলাটি নিউ জার্সিতে পাঠানোর নির্দেশ দিলেও, সেখানকার আদালত কবে শুনানি শুরু করবে বা রায় দেবে, সে বিষয়ে কোনো তারিখ এখনো জানা যায়নি।
ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসন আইনের একটি বিরল ধারা ব্যবহার করে খলিলকে বিতাড়িত করতে চেয়েছিল। এই ধারার মাধ্যমে, কোনো বিদেশি নাগরিকের উপস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির জন্য ক্ষতিকর মনে হলে, তাকে বিতাড়িত করার ক্ষমতা দেওয়া হয়।
আশ্চর্যের বিষয় হলো, খলিলের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের অভিযোগ আনা হয়নি। বরং, মার্কিন কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন যে, খলিল “হামাসের সঙ্গে সম্পর্কিত কার্যকলাপে” জড়িত ছিলেন।
তবে, খলিলের সমর্থকরা বলছেন, তিনি গত বছর গাজায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক নিয়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন। খলিলের এই আটকের ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনি অধিকারকর্মীদের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের দমননীতির অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা বাকস্বাধীনতাকে খর্ব করার শামিল।
খলিলের স্ত্রী একজন মার্কিন নাগরিক এবং তিনি আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। গভীর রাতে অভিবাসন বিভাগের কর্মকর্তারা তাকে গ্রেপ্তার করে এবং পরিবার বা আইনজীবীকে কিছু না জানিয়ে দুটি ভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে নিয়ে যায়।
অনেক সমালোচক এই ঘটনাকে স্বৈরাচারী সরকারগুলোর ‘গুমের’ সঙ্গে তুলনা করেছেন। আন্তর্জাতিক শরণার্থী সহায়তা প্রকল্পের (আইআরএপি) ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র নীতি পরিচালক হান্না ফ্ল্যাম গত সপ্তাহে আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “মি. খলিলের বেআইনি ও নিন্দনীয়ভাবে অন্তর্ধানের মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসন একটি বার্তা দিতে চাইছে।
পরিবারগুলোকে আলাদা করতে এবং জনমনে ভীতি তৈরি করতে এর আগেও যুক্তরাষ্ট্র সরকার অভিবাসন আইনকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে। তবে মি. খলিলের গ্রেপ্তার আমেরিকান বাকস্বাধীনতার গুরুতর লঙ্ঘন।
আটক হওয়ার পর মঙ্গলবার রাতে খলিল এক বিবৃতিতে নিজেকে একজন রাজনৈতিক বন্দী হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি লেখেন, “ফিলিস্তিনকে মুক্ত করা এবং গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবিতে আমার বক্তব্য প্রদানের অধিকার প্রয়োগের সরাসরি ফল হলো আমার এই গ্রেপ্তার।
সোমবার রাতে সেখানে আবার সহিংসতা শুরু হয়েছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা