মার্কিন ঋণ: ফের কি ধস নামছে, সতর্কবার্তা!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঋণমান কমিয়ে দেওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে পরিচিত দেশটির ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় শেয়ার বাজারেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

মুডি’স ইনভেস্টর সার্ভিসেস, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন একটি ক্রেডিট রেটিং সংস্থা, শুক্রবার সন্ধ্যায় আমেরিকার ঋণমান কমিয়ে দিয়েছে। এর ফলে দেশটির সরকারি বন্ড বা ট্রেজারি বন্ডের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।

মুডি’স-এর এই পদক্ষেপের কারণ হিসেবে তারা যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান ঋণের বোঝা এবং বাজেট ঘাটতি মোকাবিলায় রাজনৈতিক অচলাবস্থাকে দায়ী করেছে। ১৯১৭ সালের পর এই প্রথম মুডি’স আমেরিকার ঋণমান কমাল।

এর আগে, ফিচ রেটিং এবং এস অ্যান্ড পি গ্লোবাল-এর মতো সংস্থাগুলোও যুক্তরাষ্ট্রের ঋণমান কমিয়েছিল।

ঋণমান কমানোর ঘোষণার পর পরই শেয়ার বাজারে দরপতন শুরু হয়। বিনিয়োগকারীরা দ্রুত তাদের বিনিয়োগ তুলে নিতে শুরু করেন।

শুক্রবার দিনের শেষে, ডাউ জোন্স ফিউচার্স সূচক প্রায় ০.৮ শতাংশ এবং এস অ্যান্ড পি ৫০০ ফিউচার্স ১ শতাংশের বেশি কমে যায়। প্রযুক্তি নির্ভর নাসডাক-এর ফিউচার্স সূচকও ১.৪ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পায়।

একই সঙ্গে, বিনিয়োগকারীরা সরকারি বন্ড বিক্রি করতে শুরু করায় বন্ডের ফলন বা ইল্ড বেড়ে যায়। সাধারণত, বিনিয়োগকারীরা যখন ঝুঁকি এড়াতে চান, তখন তারা নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে স্বর্ণের দিকে ঝোঁকেন।

এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি, সোনার দাম ১.৪ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্স ৩,২৩২ ডলারে পৌঁছেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এমন পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা আবার ‘সেল আমেরিকা’ প্রবণতার দিকে ঝুঁকতে পারেন। অর্থাৎ, তারা আমেরিকান সম্পদ বিক্রি করে অন্য কোথাও বিনিয়োগ করতে পারেন।

এর আগে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি নিয়ে উদ্বেগের কারণেও এমনটা দেখা গিয়েছিল। ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের জেরে বন্ড ও ডলারের দরপতন হয়েছিল এবং শেয়ার বাজারও মন্দার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট অবশ্য এই ঋণমান কমানোর সমালোচনা করে একে পুরনো তথ্যের ভিত্তিতে নেওয়া একটি ভুল সিদ্ধান্ত হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি সিএনএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, মুডি’স-এর এই পদক্ষেপকে তিনি খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মুডি’স-এর এই পদক্ষেপ বাজারের জন্য একটি সতর্কবার্তা। তারা মনে করেন, আমেরিকার বিশাল ঋণের বোঝা দেশটির অর্থনীতির জন্য একটি বড় সমস্যা।

ইতিহাস বলছে, অতীতেও যখন কোনো রেটিং সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রের ঋণমান কমিয়েছিল, তখন শেয়ার বাজারে বড় ধরনের পতন দেখা গিয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, ২০১১ সালে এস অ্যান্ড পি-র ঋণমান কমানোর পরদিন শেয়ার বাজার প্রায় ৭ শতাংশ পর্যন্ত পড়ে গিয়েছিল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যনীতি এবং ট্রাম্পের সম্ভাব্য নতুন শুল্কনীতি নিয়েও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়তে পারে। যদি ট্রাম্প প্রশাসন বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তিনি তাদের ওপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করতে পারেন, যা বাজারের জন্য আরও একটি উদ্বেগের কারণ হবে।

মোটকথা, আমেরিকার ঋণমান কমার ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে। এর সরাসরি প্রভাব বাংলাদেশে নাও পড়তে পারে, তবে বিশ্ব অর্থনীতির এই টালমাটাল অবস্থার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও কিছু পরোক্ষ প্রভাব পড়তে পারে।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *