যুক্তরাষ্ট্রে অসহ্য গরম: জনজীবন বিপর্যস্ত!

যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলে তীব্র দাবদাহ, চরম দুর্ভোগে কোটি কোটি মানুষ।

যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলে মারাত্মক তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে, যার ফলে সেখানকার কোটি কোটি মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। তাপমাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছানোয় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এবং আগামী কয়েক দিন এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, এই তাপপ্রবাহের মূল কারণ হলো ‘হিট ডোম’ বা তাপের গম্বুজ। এটি বায়ুমণ্ডলের একটি উচ্চচাপ ব্যবস্থা, যা তাপ ও আর্দ্রতাকে আটকে রাখে, ফলে তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এর প্রভাবে মিনেসোটা থেকে শুরু করে মেইন পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষজন তীব্র গরমের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। এছাড়া, আরকানসাস, টেনিসি, লুইজিয়ানা ও মিসিসিপির কিছু অংশেও তাপপ্রবাহ চলছে।

গত কয়েকদিনে তাপমাত্রা রেকর্ড ছাড়িয়েছে। শিকাগোতে তাপমাত্রা ছিল ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৯.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস), আর উইসকনসিনের ম্যাডিসনে ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস) পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়েছে। গরমের কারণে সেখানকার বার্ষিক নগ্ন বাইক রাইড বাতিল করতে হয়েছে।

ম্যাডিসন শহরের উপকণ্ঠ সান প্রেইরির বাসিন্দা লিন ওয়াটকিন্স, যিনি একটি ডে-কেয়ার সেন্টারের পরিচালক, জানিয়েছেন, তিনি বাইরে গ্রিল করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু এত গরম ছিল যে তাকে দ্রুত ঘরে ফিরতে হয়েছে। সোমবার ডে-কেয়ার সেন্টারে সব ধরনের আউটডোর কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।

ফিলাডেলফিয়ায় রবিবার তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস) এবং সোমবার ১০৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস) পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। শহর কর্তৃপক্ষ জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে বাসিন্দাদের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্থানে আশ্রয় নিতে বলেছে। এছাড়া, গরমের কারণে অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য একটি হটলাইনও খোলা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া অফিসের মতে, মিনিয়াপলিসে তাপমাত্রার সূচক ১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৪১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস) পর্যন্ত পৌঁছেছিল। সেখানকার তাপমাত্রা ছিল ৯৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৫.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস), যা ১৯১০ সালের পুরনো রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। নিউইয়র্ক শহরে সোমবার ও মঙ্গলবার তাপমাত্রা ৯৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস) পর্যন্ত থাকতে পারে। বোস্টনে মঙ্গলবার তাপমাত্রা প্রায় ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস) পর্যন্ত পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া, ওয়াশিংটন ডিসিতেও মঙ্গলবার ও বুধবার তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটে পৌঁছাতে পারে।

আবহাওয়াবিদ মার্ক গেহরিং জানিয়েছেন, সাধারণত জুলাই বা আগস্ট মাসে এমন গরম দেখা যায়, তবে এত বেশি অঞ্চলের ওপর একইসঙ্গে তাপপ্রবাহের প্রভাব দেখা যাওয়াটা অস্বাভাবিক। খেলোয়াড়দেরও এই গরমের কারণে সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সিনসিনাটি রেডসের শর্টস্টপ এলি ডি লা ক্রুজ এবং সিয়াটল মেরিনার্সের রিলিভার ট্রেন্ট থর্নটন অতিরিক্ত গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বজুড়ে চরম আবহাওয়ার ঘটনা বাড়ছে। এই তাপপ্রবাহ তারই একটি উদাহরণ। বাংলাদেশের মানুষকেও ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *