মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক তথ্য নিয়ে সন্দেহ: বাংলাদেশের জন্য এর অর্থ কী?
যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক তথ্য-উপাত্তের সত্যতা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। দেশটির লেবার স্ট্যাটিস্টিকস ব্যুরোর প্রধানকে সম্প্রতি বরখাস্ত করার ঘটনার পর বিশ্বজুড়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। যদিও ডেটা পরিবর্তনের সরাসরি কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি, তবুও এমন উদ্বেগের কারণ হলো, নির্ভরযোগ্য অর্থনৈতিক তথ্য বিশ্ব অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এবং এর প্রভাব বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপরও পড়ে।
একটি পরিবার যেমন তাদের হিসাব-নিকাশের ওপর নির্ভর করে, তেমনি বিশ্ববাজারও যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রধান অর্থনীতির দেশগুলোর দেওয়া তথ্যের ওপর আস্থা রাখে।
অতীতে গ্রিস ও আর্জেন্টিনার মতো দেশগুলোতে অর্থনৈতিক তথ্য কারচুপি করার ফলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে গিয়েছিল এবং এর ফলস্বরূপ অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছিল। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি অনেক শক্তিশালী, তবুও এমন ঘটনাগুলো নির্ভরযোগ্য তথ্যের গুরুত্বের বিষয়টি মনে করিয়ে দেয়। স্বচ্ছ ও নির্ভরযোগ্য ডেটা তৈরি করা হলে তা বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ায় এবং এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হয়, যা বাংলাদেশের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি বর্তমানে বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে দেশটির জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ৩ শতাংশ। দেশটির অর্থনীতি প্রায় ৩০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের।
এই বিশালতা গ্রিস বা আর্জেন্টিনার নেই। তবে, শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য পরিবর্তনে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেকে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ সালের আগস্টে প্রকাশিত এক তথ্যে দেখা যায়, এর আগের বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থান আগের হিসাবের চেয়ে ৮ লাখ ১৮ হাজার কম ছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন বড় ধরনের পরিবর্তন সম্ভবত তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি এবং অর্থনৈতিক মডেলগুলোতে গভীর সমস্যা নির্দেশ করে। তারা মনে করেন, ডেটা তৈরিতে কাঠামোগত কিছু সমস্যা রয়েছে।
কিছু অর্থনীতিবিদ মনে করেন, ডেটা তৈরিতে আরও আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিত, যাতে তথ্যের নির্ভুলতা বাড়ে।
আরেকটি বিষয় হলো, বাজেট কাটছাঁটের কারণে শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিএলএস) কিছু ডেটা সংগ্রহ কমিয়ে দেবে বলে জানিয়েছে। এর ফলে চূড়ান্ত তথ্য পেতে বেশি সময় লাগতে পারে।
সাধারণত, বড় কোম্পানিগুলো প্রথমে তাদের তথ্য দেয়, আর ছোট কোম্পানিগুলো পরে জানায়। ফলে প্রাথমিক হিসাব প্রকাশের পর অনেক তথ্য আসে, যার কারণে সংশোধন করার প্রয়োজন হয়।
তবে, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তথ্য সংগ্রহের জন্য অন্যান্য উৎসও রয়েছে, যেমন – জনগণনা ব্যুরো ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ ব্যুরো। এই সংস্থাগুলোতে প্রায় সবাই পরিসংখ্যানবিদ ও অর্থনীতিবিদ। তাদের কাজকর্মে কোনো রাজনৈতিক প্রভাব থাকে না।
অতএব, অর্থনৈতিক তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি বিশ্ব অর্থনীতির স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ওপর বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বিনিয়োগও নির্ভরশীল। এমন পরিস্থিতিতে তথ্যের স্বচ্ছতা ও নির্ভরযোগ্যতা বজায় রাখা জরুরি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন