যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি: মূল্যবৃদ্ধির চাপ কমছে, উদ্বেগে বাণিজ্য যুদ্ধ।
গত মাসে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাইকারি পর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধির হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত সরকারি তথ্য অনুযায়ী, মার্চ মাসে উৎপাদক মূল্য সূচক (Producer Price Index – PPI) ০.৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
এটি মূলত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি কার্যকর হওয়ার পূর্বের চিত্র। এই তথ্য অর্থনীতির স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত দিলেও, বাণিজ্য যুদ্ধ এবং শুল্কের কারণে ভবিষ্যতে ভোক্তাদের উপর এর প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
অর্থনীতিবিদরা ধারণা করেছিলেন, মাসিক ভিত্তিতে মূল্যবৃদ্ধি ০.২ শতাংশ হতে পারে এবং বার্ষিক ভিত্তিতে তা ৩.৩ শতাংশে পৌঁছাতে পারে। কিন্তু বাস্তবে, সূচক আরও ভালো ফল দেখিয়েছে।
উৎপাদক মূল্য সূচক (PPI), যা প্রস্তুতকারকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত পণ্যের দামের পরিবর্তন পরিমাপ করে, ভবিষ্যতের খুচরা মূল্যস্ফীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হিসেবে বিবেচিত হয়। এছাড়া, ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন এবং প্রস্তাবিত শুল্কের প্রাথমিক প্রভাবগুলো বোঝার ক্ষেত্রেও এই সূচকটি গুরুত্বপূর্ণ।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স (Consumer Price Index – CPI) ডাটা অনুযায়ী, সাধারণভাবে আমেরিকানদের ব্যবহৃত পণ্য ও সেবার মূল্যবৃদ্ধিও কমেছে। যদিও, চীন সহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ এবং শুল্কের কারণে ভোক্তাদের জন্য কিছু মূল্যবৃদ্ধি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মার্চ মাসে জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ায় সামগ্রিক PPI কমেছে। জ্বালানির চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্যহীনতা এবং তেলের দামের উপর মন্দার আশঙ্কার কারণে এমনটা হয়েছে।
এই সময়ে সাধারণত জ্বালানির দাম বাড়ে, কিন্তু সরবরাহ বেশি থাকায় দাম কমেছে।
খুচরা খাদ্যপণ্যের দামও কমেছে, যা ২.১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। খাদ্য ও জ্বালানি বাদে, মূল PPI (Core PPI), যা অস্থির প্রকৃতির, ফেব্রুয়ারিতে ০.১ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার পর মার্চে ০.১ শতাংশ কমেছে।
এর ফলে বার্ষিক মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে ৩.৩ শতাংশ, যা গত সেপ্টেম্বরের পর সর্বনিম্ন।
মার্কিন অর্থনীতির এই পরিবর্তনগুলো বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। কারণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতি, বিশেষ করে শুল্কের প্রভাব, বাংলাদেশের আমদানি ও রপ্তানির উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যের দাম বাড়ে, তবে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের জন্য তা প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকা কঠিন করে তুলবে। আবার, মার্কিন অর্থনীতির দুর্বলতা বিশ্ব অর্থনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে, যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ব্যাহত করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের উচিত হবে এই পরিবর্তনগুলোর দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা এবং সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া। বাণিজ্য সম্পর্ক স্থিতিশীল রাখতে এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি কমাতে, সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
তথ্য সূত্র: CNN