মার্কিন অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কা, বিশ্ব বাণিজ্যে বাংলাদেশের জন্য কী প্রভাব?
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে মন্দা আসার সম্ভাবনা বাড়ছে, এমনটাই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সূচকগুলোতে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে দেশটির জিডিপি বা মোট দেশজ উৎপাদন (GDP) উল্লেখযোগ্য হারে সংকুচিত হয়েছে, যা গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। অর্থনীতির এই দুর্বল চিত্র দেশটির বাণিজ্য নীতি এবং বিশ্ব অর্থনীতির ওপর ফেলতে পারে বড় ধরনের প্রভাব। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য রয়েছে উদ্বেগের কারণ।
প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বছরের প্রথম প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি বার্ষিক ০.৩ শতাংশ হারে হ্রাস পেয়েছে। যেখানে এর আগের প্রান্তিকে জিডিপি বেড়েছিল ২.৪ শতাংশ হারে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পতন প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি। এই পরিস্থিতিতে দেশটির সরকার বাণিজ্য নীতিতে কিছু পরিবর্তন আনলে তার প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও পড়তে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা কমে যাওয়া এবং দেশটির বাণিজ্য নীতিতে অস্থিরতা দেখা দেওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি এবং বাণিজ্য নিয়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্তের কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে, তার সরাসরি প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পড়তে পারে। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য সহযোগী হওয়ায়, দেশটির ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেলে আমাদের রপ্তানি খাতেও তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, চামড়া ও পাটজাত পণ্যের ভালো চাহিদা রয়েছে। দেশটির অর্থনৈতিক মন্দা দীর্ঘায়িত হলে, এই পণ্যগুলোর রপ্তানি কমে যেতে পারে, যা দেশের অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করবে। এছাড়া, রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রেও কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে, কারণ যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করা অনেক বাংলাদেশি কর্মীর আয় কমে গেলে দেশে পাঠানো অর্থের পরিমাণও হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তবে, এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ, সরকারিভাবে এখনো এটিকে মন্দা ঘোষণা করা হয়নি। অর্থনৈতিক মন্দা নির্ধারণের কিছু মানদণ্ড রয়েছে, যা এখনো পূরণ হয়নি। সাধারণত, টানা দুটি প্রান্তিকে জিডিপি ঋণাত্মক থাকলে তবেই তাকে মন্দা হিসেবে ধরা হয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে পারে, যদি দেশটির সরকার দ্রুত উপযুক্ত পদক্ষেপ নেয়। বাণিজ্য নীতি স্থিতিশীল করা এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে। একইসঙ্গে, বাংলাদেশের সরকারকেও পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি রাখতে হবে। রপ্তানি বাজার বহুমুখীকরণ এবং নতুন বাণিজ্য সম্ভাবনা অনুসন্ধানের মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা যেতে পারে। বিশ্ব অর্থনীতির এই টালমাটাল পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজন সতর্ক পদক্ষেপ এবং সঠিক নীতি গ্রহণ।
তথ্য সূত্র: সিএনএন