মার্কিন অর্থনীতি: ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধের ফল?

মার্কিন অর্থনীতিতে মন্দা, বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিয়েছে, যা গত তিন বছরে প্রথমবারের মতো। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশটির জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) ০.৩ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, এর প্রধান কারণ হলো প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি এবং শুল্ক আরোপের ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে দেখা দেওয়া অস্থিরতা। এছাড়া, ভোক্তাদের ব্যয় হ্রাসও এই মন্দার একটি কারণ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ২.৪ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল। কিন্তু চলতি বছরের শুরুতে আমদানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

মূলত, ট্রাম্প প্রশাসনের বিশাল শুল্ক আরোপের আগেই ব্যবসায়ীরা বিদেশি পণ্য আমদানি করতে শুরু করেন, যার ফলস্বরূপ এই মন্দা। আমদানির পরিমাণ দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় তা জিডিপি’র ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

ভোক্তা ব্যয়ের ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। আগের বছর যেখানে এটি ৪ শতাংশ হারে বেড়েছিল, সেখানে চলতি বছর তা কমে ১.৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

সরকারি ব্যয়ও কমেছে, যা জিডিপি হ্রাসের অন্যতম কারণ।

অর্থনীতিবিদদের ধারণা ছিল, প্রথম প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি সামান্য বাড়বে। কিন্তু তাদের সেই পূর্বাভাস ভুল প্রমাণিত হয়েছে।

বাজারের এই পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারেও বড় ধরনের পতন দেখা গেছে। ডাউ জোনস সূচক প্রায় ৪০০ পয়েন্ট এবং এসএন্ডপি ৫০০ সূচক ১.৫ শতাংশ কমেছে।

এছাড়া, নাসডাক কম্পোজিটও ২ শতাংশের বেশি হ্রাস পেয়েছে।

তবে, অর্থনীতিবিদ পল অ্যাশworth-এর মতে, এপ্রিল-জুন মাসের মধ্যে অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে। কারণ, আমদানি বৃদ্ধি দ্বিতীয় প্রান্তিকে কমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সাধারণত, বাণিজ্য ঘাটতি জিডিপি’র ওপর প্রভাব ফেলে। তবে, জিডিপি মূলত অভ্যন্তরীণ উৎপাদনকে বিবেচনা করে।

তাই, আমদানি বাড়লে তা জিডিপি’র হিসাব থেকে বাদ দিতে হয়, যাতে অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের প্রকৃত চিত্র পাওয়া যায়।

অর্থনীতির কিছু গুরুত্বপূর্ণ সূচক এখনো ভালো অবস্থানে রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, জিডিপি ডেটার একটি অংশ, যা অর্থনীতির মূল শক্তি পরিমাপ করে, সেটি জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ৩ শতাংশ হারে বেড়েছে।

আগের বছর চতুর্থ প্রান্তিকে এটি ছিল ২.৯ শতাংশ। এই অংশে ভোক্তা ব্যয় এবং বেসরকারি বিনিয়োগ অন্তর্ভুক্ত থাকে, তবে রপ্তানি, সরকারি ব্যয় বাদে অস্থির বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয় না।

তবে, অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করেন, ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি এবং শুল্ক আরোপের কারণে বছরের দ্বিতীয়ার্ধে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারা আশঙ্কা করছেন, মন্দা আরও ঘনীভূত হতে পারে।

আমরা মনে করি, চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে অর্থনীতির মন্দা আরও খারাপ হবে। অনিশ্চয়তা এবং শুল্কের মতো উচ্চ কর জিডিপি’র প্রবৃদ্ধিকে আবারও কমিয়ে দেবে।

এই পরিস্থিতিতে, ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক (ফেড) -এর নীতিনির্ধারকদের জন্য একটি কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কারণ, মূল্যস্ফীতি এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি।

তাদের এখন সুদহার কমানো বা বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যদি তারা সুদের হার কমায়, তবে তা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারে।

কিন্তু মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি ব্যবসার জন্য উদ্বেগের কারণ হয়েছে। এর ফলস্বরূপ, অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে।

এপ্রিল মাসে কোম্পানিগুলো মাত্র ৬২ হাজার নতুন কর্মী নিয়োগ করেছে, যেখানে প্রত্যাশা ছিল এর দ্বিগুণ।

এ বিষয়ে এডি’পি’র প্রধান অর্থনীতিবিদ নেলা রিচার্ডসন বলেন, “এমন পরিস্থিতিতে কর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন।”

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *