মার্কিন অর্থনীতি: কোভিড-১৯ এর পর সবচেয়ে খারাপ সময়?

মার্কিন অর্থনীতিতে মন্দাভাব, বাংলাদেশের জন্য কী সম্ভাবনা?

সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে কিছুটা ধীরগতি দেখা গেছে। বাণিজ্য নীতিতে আকস্মিক পরিবর্তনের কারণে দেশটির অর্থনীতিতে এই প্রভাব পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য এর ভালো এবং খারাপ উভয় দিকই থাকতে পারে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, প্রথম প্রান্তিকে জিডিপি’র (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধি খুবই কম ছিল। কোনো কোনো অর্থনীতিবিদ এই হার ০.৮ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে বলে জানিয়েছেন। আবার, আটলান্টার ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক আশঙ্কা করছে, এই হার ২.৫ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে, যা কোভিড-১৯ মহামারীর পর থেকে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই অর্থনৈতিক দুর্বলতার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো—আমদানি বৃদ্ধি, যা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতি এড়ানোর চেষ্টা হিসেবে দেখা যাচ্ছে।

শীতকালীন আবহাওয়ার কারণে ভোক্তারা কেনাকাটা থেকে বিরত ছিলেন, যা ব্যয়ের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে। এছাড়া, ব্যবসায়ীরাও ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিমালার কারণে বিনিয়োগে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতিও একটি উদ্বেগের বিষয়। ট্রাম্প প্রশাসন বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বেশ কিছু শুল্ক আরোপ করেছে, কিন্তু সরকারি তথ্য বলছে, পরিস্থিতি বরং আরও খারাপ হয়েছে।

জানুয়ারিতে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে ১৩০.৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল, যা ১৯৯৪ সালের পর সর্বোচ্চ। ফেব্রুয়ারিতে কিছুটা কমলেও সেটি ছিল ইতিহাসের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঘাটতি। (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী, ১৩০.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রায় ১৪ লক্ষ কোটি টাকার সমান)।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ার পেছনে প্রধান কারণ ছিল শিল্পপণ্য এবং ভোগ্যপণ্যের আমদানি বৃদ্ধি।

ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের ব্যয়ের ক্ষেত্রেও দুর্বলতা দেখা গেছে। জানুয়ারিতে পণ্য ও সেবা খাতে ব্যয় ০.৩ শতাংশ কমেছিল।

তবে, মার্চ মাসে ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের আগেই কেনাকাটা বেড়ে যাওয়ায় খুচরা বিক্রি বাড়ে।

ব্যবসায়ীদের মধ্যে ট্রাম্পের নীতি নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা রয়েছে। উৎপাদন ও পরিষেবা খাতে এর প্রভাব পড়েছে।

ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কিছুটা সতর্ক ছিলেন, যদিও মার্চ মাসে ব্যবসার মূলধনী সামগ্রীর ক্রয় কিছুটা বেড়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জ দুটোই তৈরি করতে পারে। যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনসহ অন্য দেশগুলোর ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করে, তবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের মতো কিছু পণ্যের রফতানি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

অন্যদিকে, বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিলে তা বাংলাদেশের বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বাংলাদেশের অর্থনীতি কিভাবে এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খায়, সেটি এখন দেখার বিষয়।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *