যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন আলোচনার ভবিষ্যৎ কী? ট্রাম্প প্রশাসনের সম্ভাব্য পদক্ষেপ এবং এর প্রভাব নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে জল্পনা চলছে। রাশিয়ার সঙ্গে একটি সম্ভাব্য শান্তি চুক্তির আলোচনা চলছে, তবে এতে ইউক্রেনের জন্য পরিস্থিতি অনুকূল নাও হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
আলোচনায় মূল বিষয়গুলো হলো, ইউক্রেনকে তাদের ভূখণ্ডের কিছু অংশ ছাড়তে হতে পারে এবং ন্যাটো জোটে যোগদানের সম্ভাবনাও হয়তো ত্যাগ করতে হবে। এই পরিস্থিতিতে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কিছু বক্তব্য এবং পদক্ষেপ অনেককেই রাশিয়ার প্রতি সহানুভূতিশীল মনে হয়েছে।
তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে প্রকাশ্যে তিরস্কার করেছেন এবং ক্রেমলিনের বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন। এমনকি, কয়েক মাস আগেও যা ছিল কল্পনাতীত, তেমনভাবে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
অন্যদিকে, সম্প্রতি ট্রাম্পের কিছু মন্তব্য কিছুটা ভিন্ন বার্তা দিচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন কিছু পোস্ট দেখা গেছে, যেখানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্ভবত তাকে (ট্রাম্পকে) ভুল পথে চালিত করছেন বলে মনে হয়।
তবে, এখন পর্যন্ত কোনো চূড়ান্ত চুক্তি হয়নি।
বর্তমানে, রাশিয়া আলোচনার দিক থেকে সুবিধা পেতে শুরু করেছে। এর কারণ হলো, ইউক্রেন আক্রমণের পর দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে যে চরম বৈরী সম্পর্ক ছিল, তা আবার আলোচনায় ফিরে এসেছে।
শুধু যুদ্ধ নয়, দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয় নিয়েও তারা কথা বলছে। রাশিয়ার সরকারি গণমাধ্যম জানাচ্ছে, ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে মস্কো ও ওয়াশিংটন “বিশ্বের নতুন কাঠামো” তৈরির চেষ্টা করছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, রাশিয়া এরই মধ্যে তাদের প্রধান লক্ষ্য অর্জন করেছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রের সমকক্ষ একটি দেশ হিসেবে নিজেদের তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। তবে, এখন পর্যন্ত আলোচনার বিষয়গুলো কেবল কথার মাঝেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।
কোনো প্রস্তাবই চূড়ান্ত রূপ নেয়নি।
আলোচনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার দখলকৃত এলাকাগুলো নিয়ে দুই পক্ষের অনড় অবস্থান। ইউক্রেন কোনো ভূমি ছাড়তে রাজি নয় এবং ভবিষ্যতের আগ্রাসন থেকে নিজেদের রক্ষা করতে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা চাইছে।
অন্যদিকে, রাশিয়া তাদের অধিকৃত অঞ্চলগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায় এবং ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের বিরোধিতা করে। তারা ইউক্রেনকে সামরিক শক্তি কমানোর জন্য চাপ দিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শান্তি আলোচনার ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী ইউক্রেনের জন্য আত্মরক্ষার অপরিহার্য। যদি ইউক্রেন অস্ত্র সংগ্রহের ক্ষেত্রে বা সেনাবাহিনীর আকার সীমিত করতে বাধ্য হয়, তাহলে তাদের জন্য এই ধরনের চুক্তি মেনে নেওয়া কঠিন হবে।
এমন পরিস্থিতিতে, রাশিয়া চাইছে আন্তর্জাতিকভাবে তাদের দখলকৃত অঞ্চলগুলোর স্বীকৃতি আদায় করতে। তবে, অনেক দেশ এরই মধ্যে রাশিয়ার এই পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হিসেবে নিন্দা জানিয়েছে।
আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যদি যুক্তরাষ্ট্র আলোচনা থেকে সরে আসে, তাহলে কী হবে? অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, পুতিনের জন্য যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করা এবং যুদ্ধক্ষেত্রে সুবিধা আদায় করা সুবিধাজনক।
কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, ট্রাম্প প্রশাসন যদি শান্তি প্রক্রিয়া থেকে সরে আসে এবং রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে, তাহলে তা পুতিনের জন্য একটি বড় জয় হবে। তবে, এই কাজটি খুব সহজ হবে না।
কারণ, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মার্কিন কংগ্রেসে রাশিয়ার ওপর অনেক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
সব মিলিয়ে, ইউক্রেন সংকটের সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা এবং ট্রাম্প প্রশাসনের সম্ভাব্য পদক্ষেপগুলো একটি জটিল পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এর ফলস্বরূপ, ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়তে পারে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস