মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (United States – ইউএস) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (European Union – ইইউ) মধ্যে একটি বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে। উভয় পক্ষের মধ্যে শুল্কের হার নিয়ে মতবিরোধের জের ধরে, এই জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।
পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, আসন্ন দিনগুলিতে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমে ইইউ-এর পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন। তবে, ইইউ-এর পক্ষ থেকে আলোচনার জন্য আরও সময় চাওয়ার পর, তিনি সেই সময়সীমা পিছিয়ে দেন।
ইইউ-এর প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লিয়েন ট্রাম্পকে জানান যে, একটি ভালো চুক্তিতে পৌঁছাতে তাদের আরও কিছু সময় প্রয়োজন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্প আলোচনার সময়সীমা ৯ জুলাই পর্যন্ত বাড়িয়েছেন, যা আগে ১ জুন ধার্য করা হয়েছিল।
এই বিষয়ে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁও মন্তব্য করেছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে, ওয়াশিংটন ও ব্রাসেলস সর্বনিম্ন শুল্কের হারে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে পারবে।
মূলত, ট্রাম্প প্রশাসনের ধারণা, ইইউ-এর সঙ্গে আলোচনা কাঙ্ক্ষিত গতিতে অগ্রসর হচ্ছে না। ট্রাম্প সরাসরি অভিযোগ করে বলেন, ‘তাদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা কোনো ফল দিচ্ছে না’।
এর প্রতিক্রিয়ায় তিনি ১ জুন, ২০২৫ থেকে ইইউ-এর সকল পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেন। তবে, পরে তিনি সুর নরম করে নেন এবং আলোচনার জন্য সময় দিতে রাজি হন।
জানা যায়, ইইউ-এর পক্ষ থেকে শুল্কমুক্ত বাণিজ্যের প্রস্তাব দেওয়া হলেও, ট্রাম্প এতে রাজি নন। তিনি উভয় পক্ষের আমদানি পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক বজায় রাখতে চান।
অন্যদিকে, ইইউ বাণিজ্য প্রধান মারোস সেফকোভিক জানিয়েছেন, উভয় পক্ষের জন্য কাজ করে এমন একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে ইইউ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে, তিনি সতর্ক করে বলেছেন, ইইউ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য ‘হুমকির পরিবর্তে পারস্পরিক সম্মানের’ ভিত্তিতে পরিচালিত হতে হবে।
২০২৪ সালে ইইউ, যুক্তরাষ্ট্রকে প্রায় ৬০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৭২ হাজার কোটি টাকা) মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে ওষুধ, গাড়ি এবং যন্ত্রাংশ, রাসায়নিক দ্রব্য ও বিমানের মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্য ছিল।
এই বাণিজ্য বিরোধের কারণে উভয় অর্থনীতিই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (International Monetary Fund – আইএমএফ) একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, যদি যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ-এর মধ্যে পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হয়, তবে উভয় পক্ষের জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন)-র ০.৩ থেকে ০.৬ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতি হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে যে, ইইউ তাদের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি বজায় রেখেছে। তারা ইইউ-এর ভ্যাট এবং তথ্যপ্রযুক্তি ও খাদ্য রপ্তানির নিয়মনীতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।
এই পরিস্থিতিতে, উভয় পক্ষই তাদের অবস্থান থেকে নড়তে নারাজ। একদিকে যেমন বাণিজ্য আলোচনা চলছে, তেমনই চুক্তি না হলে ইইউ পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
জানা গেছে, ইইউ প্রায় ২৩.৮ বিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা) মূল্যের মার্কিন পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে পারে, যার মধ্যে ভুট্টা, গম এবং পোশাকের মতো পণ্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এছাড়া, আরও ১০৭.৮ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা) মূল্যের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
এই বাণিজ্য যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে, যা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য উদ্বেগের কারণ। বিশ্ব বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হলে, বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা