আতঙ্কের পূর্বাভাস! চরম আবহাওয়ার কবলে যুক্তরাষ্ট্র, বাড়ছে বিপদ

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলি বাড়ছে, কিন্তু এর মোকাবিলায় জনগণের মানসিকতা এবং প্রস্তুতি এখনো যথেষ্ট নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটিতে বন্যা, দাবদাহ, দাবানল এবং ঘূর্ণিঝড়ের মতো দুর্যোগের সংখ্যা বেড়েছে, যা উদ্বেগের কারণ।

আবহাওয়াবিদ ও দুর্যোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলো আরও ঘন ঘন এবং তীব্র হচ্ছে।

১৯৮০-এর দশকের তুলনায়, ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (NOAA)-এর জলবায়ু চরম সূচকের ১০ বছরের গড় পরিমাণ ৫৮ শতাংশ বেড়েছে।

টেক্সাসে ১৯৮৭ সালের ভয়াবহ বন্যার পর অনেকেই ভেবেছিলেন তারা প্রকৃতির রুদ্র রূপকে সামলাতে সক্ষম। কিন্তু সম্প্রতি কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অপ্রত্যাশিত বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট বন্যায় একশ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উত্তর-পশ্চিম এবং কানাডার পশ্চিমাঞ্চলে আগে তীব্র দাবদাহ দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা কম ছিল, কিন্তু সেখানেও এমন ঘটনা ঘটেছে। হাওয়াই দ্বীপেও দেখা গেছে দাবানল।

উত্তর ক্যারোলিনার মানুষজন ঘূর্ণিঝড়কে উপকূলীয় অঞ্চলের সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করত, কিন্তু সেখানেও হ্যারিকেন হেলেনের ধ্বংসাত্মক প্রভাব দেখা গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলো এখন স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির জলবায়ু বিজ্ঞানী মাইকেল ওপেনহাইমারের মতে, আগে যা চরম ছিল, তা এখন সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

উদ্বেগের বিষয় হলো, সমাজের মানুষজন এখনো যথেষ্ট সতর্ক হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে চরম আবহাওয়ার জন্য প্রস্তুত না থাকলে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

তবে শুধু জলবায়ু পরিবর্তনই নয়, এই পরিবর্তনের প্রতি আমাদের প্রতিক্রিয়াও পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করতে পারে। জর্জিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়াবিদ মার্শাল শেফার্ডের মতে, মানুষ অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়, যা তাদের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।

উদাহরণস্বরূপ, টেক্সাসের বন্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেখানকার মানুষজন প্রায়ই বন্যার শিকার হয়, তাই তারা এটিকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে ধরে নেয়। কিন্তু গত কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিপাতের ফলে হওয়া বন্যা কোনোভাবেই স্বাভাবিক ছিল না।

ইউনিভার্সিটি কর্পোরেশন ফর অ্যাটমোস্ফিয়ারিক রিসার্চের আবহাওয়াবিদ কিম ক্লকও ম্যাকলেইন বলেছেন, দুর্যোগ সম্পর্কে মানুষের ধারণা পরিবর্তন করা দরকার। তিনি আরও বলেন, সামান্য বন্যা হলেও, টেক্সাসের ঘটনার দিকে তাকিয়ে বুঝতে হবে যে পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে।

দুর্যোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভুগলে চলবে না। ভবিষ্যতের জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।

অবকাঠামোগত দুর্বলতা, দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং জলবায়ু সম্পর্কিত সংস্থাগুলোতে অর্থায়ন কমানো পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবিষ্যতে আরও বেশি বন্যা, দাবানল এবং তীব্র গরমের মতো ঘটনা ঘটবে। তাই অতীতের অভিজ্ঞতার পরিবর্তে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে এবং খারাপ পরিস্থিতির জন্য পরিকল্পনা করতে হবে।

তথ্য সূত্র: Associated Press

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *