মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রণালয় জীবাশ্ম জ্বালানি এবং খনিজ প্রকল্পের অনুমোদন প্রক্রিয়া দ্রুততর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘জরুরি অবস্থা’ ঘোষণার প্রেক্ষিতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে, যদিও অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, এমন কোনো জরুরি অবস্থার অস্তিত্ব নেই।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগে যেখানে অনুমোদন প্রক্রিয়ায় কয়েক বছর পর্যন্ত সময় লাগতো, এখন তা সর্বোচ্চ ২৮ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
বুধবার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই ঘোষণা আসার পরেই পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো এর তীব্র সমালোচনা করেছে। তারা এটিকে গ্রহনের জন্য ক্ষতিকর জীবাশ্ম জ্বালানির উৎপাদন বাড়ানোর একটি অপচেষ্টা হিসেবে বর্ণনা করেছে এবং এর বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।
তাদের মতে, এটি পরিবেশ রক্ষার মূল আইনের চরম লঙ্ঘন। সাধারণত, কোনো প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন করতে যেখানে এক বছর সময় লাগে, সেখানে এখন মাত্র ১৪ দিনে তা সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে।
একইসঙ্গে, পরিবেশগত প্রভাবের পূর্ণাঙ্গ বিবৃতি, যা সাধারণত দুই বছর সময় নেয়, তা এক মাসের মধ্যেই শেষ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
তবে, সমালোচকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সুরক্ষার বিদ্যমান নিয়ম-কানুনকে দুর্বল করবে। জানা গেছে, দেশটির পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত অন্তত ছয়টি জাতীয় স্মৃতিস্তম্ভের সুরক্ষা কমানোর বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে।
একইসঙ্গে, ওই এলাকাগুলোতে খনন ও খনিজ উত্তোলনের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দ্রুত অনুমোদন প্রক্রিয়ার মূল উদ্দেশ্য হলো— “দেশীয় জ্বালানি সম্পদ এবং গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করা।”
মন্ত্রণালয়ের সচিব ডগ বার্গাম বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র আর অপেক্ষা করতে পারে না। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন, আমাদের জ্বালানি নিরাপত্তা, জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত এবং এই জরুরি প্রক্রিয়া উভয় সুরক্ষাই নিশ্চিত করবে। বহু বছরের অনুমোদন প্রক্রিয়াকে মাত্র ২৮ দিনে কমিয়ে আনার মাধ্যমে মন্ত্রণালয় জরুরি ভিত্তিতে কাজ করবে এবং দেশের জ্বালানি স্বাধীনতাকে শক্তিশালী করতে দৃঢ়ভাবে কাজ করবে।”
যদিও ট্রাম্প প্রশাসন “জ্বালানি জরুরি অবস্থা”র কথা বলছে, কিন্তু বাস্তবে যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে ইতিহাসের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি তেল ও গ্যাস উত্তোলন করছে। ট্রাম্পের “খনন করো, বেবি, খনন করো” নীতি এরই মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানির উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করেছে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পদক্ষেপগুলোকে দুর্বল করেছে।
এমনকী, সৌরবিদ্যুৎ-এর মতো পরিষ্কার শক্তির ব্যবহারকে উৎসাহিত করতে বাইডেন প্রশাসনের নেওয়া পদক্ষেপগুলোর বিরোধিতা করা হয়েছে।
পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা সেন্টার ফর বায়োলজিক্যাল ডাইভার্সিটির সরকারি বিষয়ক পরিচালক ব্রেন্ট হার্টল নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, এই পদক্ষেপগুলো “জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগকে ব্যাপকভাবে খর্ব করবে।” তিনি আরও যোগ করেন, “যদি অন্য কোনো কারণে না-ও হয়, তবে এই তথাকথিত জরুরি অবস্থা পুরোটাই ভুয়া।
আমরা এর বিরুদ্ধে আদালতে যাব এবং চ্যালেঞ্জ করব।” এই অনুমোদন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে জাতীয় পরিবেশ নীতি আইন, বিপন্ন প্রজাতি আইন এবং জাতীয় ঐতিহাসিক সংরক্ষণ আইনের অধীনে জরুরি ক্ষমতা ব্যবহার করা হবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
 
                         
                         
                         
                         
                         
                         
				
			 
				
			 
				
			 
				
			