আতঙ্কের বৃষ্টি! আমেরিকায় বন্যা: শিশুদের জন্য বিপদ!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়; নিহত আটজন।

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যাঞ্চলে অবিরাম বৃষ্টি ও শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে ইতিমধ্যে আটজনের মৃত্যু হয়েছে এবং বহু মানুষ তাদের ঘরবাড়ি হারাতে বসেছে।

গত কয়েকদিনে টর্নেডোর তাণ্ডবে রাস্তাঘাট, বাড়িঘর এবং অন্যান্য অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে এবং উদ্ধার কার্যক্রম চলছে জোরেশোরে।

বন্যা পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ হয়েছে টেনেসি, মিসৌরি, ইন্ডিয়ানা ও কেন্টাকি রাজ্যে। কেন্টাকির ফ্রাঙ্কলিন কাউন্টিতে নয় বছর বয়সী গ্যাব্রিয়েল অ্যান্ড্রুজ নামের এক বালক বন্যার পানিতে ভেসে গেছে।

সে স্কুলের বাসের জন্য অপেক্ষা করার সময় দুর্ঘটনার শিকার হয়। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, বন্যা পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, এটিকে ‘জেনারেশনাল’ বন্যা হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে।

আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, মিসিসিপি উপত্যকার কিছু অংশে শনিবার সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হতে পারে। এর ফলে সেখানকার বাসিন্দাদের জীবনহানির শঙ্কা রয়েছে।

ইতিমধ্যেই টেক্সাস থেকে কেন্টাকি পর্যন্ত বিস্তৃত পাঁচটি রাজ্যে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বন্যার কারণে কেন্টাকিতে তিন শতাধিক রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ১০৯টি রাজ্য মহাসড়কও রয়েছে।

মিসৌরির ওয়েস্ট প্লেইনস শহরে উদ্ধারকর্মীরা বেশ কয়েকজনকে বন্যার পানি থেকে উদ্ধার করেছে। শহরটিতে একজন নারীকে বজ্রাঘাতে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জনসাধারণকে রাস্তাঘাটে চলাচল না করার জন্য সতর্ক করেছে।

কেন্টাকির হপকিন্সভিলে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে রাস্তাঘাট, বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে গেছে। সেখানকার একজন বাসিন্দা টনি কার্ভেস জানান, তিনি ১৯৯৭ সালের বন্যার অভিজ্ঞতা পুনরায় অনুভব করছেন।

তার ফটোগ্রাফি স্টুডিওটিও এবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হপকিন্সভিলে বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার পর্যন্ত পাঁচ থেকে আট ইঞ্চি বৃষ্টিপাত হয়েছে।

অন্যদিকে, টর্নেডোর কারণে টেনেসি রাজ্যের সেলমার শহর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানকার একটি নতুন অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের বাসিন্দারা ঝড়ের সময় আশ্রয় নেওয়ার জন্য নিরাপদ স্থান খুঁজেছেন।

টর্নেডোর আঘাতে কমপ্লেক্সটির সামনের অংশ প্রায় পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।

মিসৌরির পাইলট গ্রোভ শহরেও একটি টর্নেডো আঘাত হেনেছে, যার ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। নেভাদা শহরে একটি প্রাক্তন মোটেল, যা বর্তমানে শিক্ষার্থীদের আবাসস্থল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, সেখানেও টর্নেডোর কারণে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, গত কয়েকদিনে আটটি রাজ্যে ৩১টির বেশি টর্নেডোর খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে অন্তত তিনটি টর্নেডোর গতি ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী (ইএফ৩)।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অঞ্চলের আবহাওয়ার এমন প্রতিকূল পরিস্থিতির মূল কারণ হলো একটি স্থিতিশীল আবহাওয়া ব্যবস্থা, যার ফলে একই অঞ্চলে বারবার ঝড় আঘাত হানছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *