যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান ও ইয়েমেনে খাদ্য সহায়তা অব্যাহত রাখল যুক্তরাষ্ট্র, অন্যান্য কয়েকটি দেশে ত্রাণ ফের চালু।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোর খবর অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র কিছু দেশে জরুরি খাদ্য সহায়তা ফের চালু করলেও, যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান এবং ইয়েমেনে তা বহাল রাখল। এতে চরম খাদ্য সংকটে পড়া দেশ দুটির লাখ লাখ মানুষের জীবন আরও কঠিন হয়ে পড়বে।
জানা গেছে, শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র বেশ কয়েকটি দেশের জন্য খাদ্য সহায়তা বন্ধ করে দেয়। তবে পরে আন্তর্জাতিক চাপ এবং অভ্যন্তরীণ আলোচনার পর, দেশটির সরকার তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে। সোমালিয়া, সিরিয়া, লেবানন, জর্ডান, ইরাক এবং ইকুয়েডরের মতো দেশগুলোতে খাদ্য সহায়তার প্রকল্পগুলো আবার চালু করা হয়েছে। তবে, আফগানিস্তান ও ইয়েমেনের পরিস্থিতি এখনো আগের মতোই রয়েছে।
আফগানিস্তান ও ইয়েমেনে মানবিক সংকট মারাত্মক রূপ নিয়েছে। কয়েক দশক ধরে চলা যুদ্ধ এবং দারিদ্র্যের কারণে সেখানকার মানুষের জীবন বিপর্যস্ত। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (World Food Programme – WFP) তথ্য অনুযায়ী, গত বছর যুক্তরাষ্ট্র এই সংস্থাকে প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ৪৯ হাজার কোটি টাকার বেশি) সহায়তা প্রদান করেছে, যা ছিল সংস্থাটির মোট তহবিলের একটি বড় অংশ। সাহায্য বন্ধের ফলে আফগানিস্তানে জরুরি খাদ্য সহায়তা, অপুষ্টির শিকার শিশুদের চিকিৎসা, স্বাস্থ্যসেবা, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক পরিষেবা চরমভাবে ব্যাহত হবে।
আফগানিস্তানে ইতিমধ্যেই দেশটির অর্ধেকের বেশি, অর্থাৎ প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ মানুষের মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। এই পরিস্থিতিতে খাদ্য সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেখানকার মানুষের জীবন আরও কঠিন হয়ে পড়বে। শুধু খাদ্য সহায়তা বন্ধের কারণে সেখানকার প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ খাদ্য সংকটে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, ইয়েমেনে দীর্ঘদিন ধরে চলা গৃহযুদ্ধ দেশটির অর্থনীতিকে দুর্বল করে দিয়েছে, যা সেখানকার মানুষকে চরম খাদ্য সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচির হিসাব অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা বন্ধ হয়ে গেলে ইয়েমেনের প্রায় ২৪ লক্ষ মানুষ খাদ্য সহায়তা থেকে বঞ্চিত হবে। এছাড়াও, ১ লক্ষ শিশুর পুষ্টি বিষয়ক সহায়তাও বন্ধ হয়ে যাবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সহায়তা বন্ধ হয়ে গেলে ইয়েমেনের পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। বিশেষ করে, সেখানকার শিশুদের স্বাস্থ্য ও জীবন মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি (International Rescue Committee – IRC) জানিয়েছে, সহায়তা বন্ধের কারণে ইয়েমেনের প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন বিষয়ক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রথমে এই সহায়তা বন্ধ করার কারণ হিসেবে কিছু প্রশাসনিক ত্রুটির কথা বলা হলেও, বিদেশি সাহায্য বিষয়ক নীতি নিয়ে তাদের বৃহত্তর কিছু উদ্বেগের কথাও শোনা যাচ্ছে। তবে, এই মুহূর্তে আফগানিস্তান এবং ইয়েমেনের মানুষের জন্য খাদ্য সহায়তা অব্যাহত রাখা জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
তথ্য সূত্র: Associated Press