যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি অচলাবস্থা: খাদ্য ব্যাংকগুলোতে বাড়ছে চাহিদা, বাড়ছে উদ্বেগে দরিদ্র মানুষ।
যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশটির খাদ্য ব্যাংকগুলোতে খাদ্য সহায়তা চেয়ে আসা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, যা খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। কর্মহীন হয়ে পড়া সরকারি কর্মচারী এবং খাদ্য সহায়তা নির্ভর দরিদ্র মানুষজন এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রগুলোও।
ওয়াশিংটন ডিসির একটি খাদ্য ব্যাংকে গত কয়েক সপ্তাহে গ্রাহক চাহিদা দ্বিগুণ হয়েছে। টেক্সাসের একটি খাদ্য ব্যাংক জরুরি পরিস্থিতিতে ব্যবহারের জন্য রাখা ঘূর্ণিঝড় ত্রাণ তহবিল থেকে অর্থ খরচ করতে বাধ্য হয়েছে।
ফ্লোরিডার একটি সংস্থা প্রতিদিন তিন লাখ মানুষের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করলেও তাদের কর্মকর্তারা বলছেন, এই সহায়তা পর্যাপ্ত নয়। নভেম্বরে ফেডারেল খাদ্য সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় দরিদ্র আমেরিকানদের খাদ্য নিরাপত্তা চরম হুমকির মুখে পড়েছে।
একইসঙ্গে আসন্ন ক্রিসমাস ও নববর্ষের ছুটির মৌসুমে এই সংকট আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছোট-বড় মিলিয়ে এক ডজনের বেশি দাতব্য সংস্থা জানিয়েছে, তাদের পক্ষে এখন আর আগের মতো সহায়তা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাদের ভাণ্ডার দ্রুত ফুরিয়ে আসছে।
খাদ্য সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা ‘হিউস্টন ফুড ব্যাংক’-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ব্রায়ান গ্রিন বলেছেন, “আসলে খারাপ পরিস্থিতি এখনো শুরু হয়নি। নভেম্বরের শুরু থেকে আমরা যে পরিস্থিতি দেখতে পাব, তা আগে কখনো দেখা যায়নি।”
ফেডারেল সরকারের অনেক কর্মচারী বেতন পাচ্ছেন না। এই অবস্থায় তারা এবং তাদের পরিবার খাদ্য সহায়তা কেন্দ্রে ভিড় করছেন।
একইসঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসন খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি ‘সাপ্লিমেন্টাল নিউট্রিশন অ্যাসিস্টেন্স প্রোগ্রাম’ (স্ন্যাপ)-এর মাধ্যমে প্রায় ৪ কোটি ২০ লাখ আমেরিকানের জন্য খাদ্য সহায়তা বন্ধ করার ইঙ্গিত দিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রগুলোর ওপর চাপ বাড়ছে।
ভার্জিনিয়ার একটি খাদ্য সহায়তা নেটওয়ার্কের সদস্য মিইয়েট মিচি বলেন, এই পরিস্থিতি একটি ‘পারফেক্ট স্টর্ম’-এর জন্ম দিয়েছে। এই নেটওয়ার্ক স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে খাদ্য বিতরণ করে।
সরকারি অচলাবস্থা শুরুর পর থেকে তাদের কেন্দ্রগুলোতে সবসময় উপচে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। মিচি বলেন, “এটা খুবই কষ্টের। সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে।
এটা কোনো খেলা নয়, বরং এমন কিছু মানুষ আছেন, যারা কাজ করেন এবং এই পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন।”
ওয়াশিংটন ডিসির ‘সো হোয়াট এলস’ নামের একটি খাদ্য ব্যাংকের প্রধান ডেভ সিলবার্ট সিএনএনকে বলেন, “এতে একটা বিশৃঙ্খলা ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। আমরা কিভাবে সহায়তা বাড়াব?
কিভাবে প্রতি সপ্তাহে ২ লক্ষ কেজি খাদ্য বিতরণের বদলে আড়াই থেকে তিন লক্ষ কেজি খাদ্য বিতরণ করব? কিভাবে মাসে ৩ লক্ষ ডলার সংগ্রহের পরিবর্তে ৪ লক্ষ ডলার সংগ্রহ করব?”
এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারগুলোও তাদের নাগরিকদের সহায়তায় এগিয়ে আসছে। ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসাম ও সাউথ ক্যারোলাইনার গভর্নর হেনরি ম্যাকমাস্টার খাদ্য ব্যাংকগুলোকে সহায়তা করার জন্য ন্যাশনাল গার্ডের সদস্য মোতায়েন করেছেন।
নেভাদার গভর্নর জো লম্বার্ডোও একই ধরনের পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত আছেন। নিউ মেক্সিকো, মিনেসোটা, ওয়াশিংটন ও ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া ত্রাণ কর্মসূচির জন্য এরই মধ্যে কয়েক মিলিয়ন ডলার অর্থ বরাদ্দ করেছে।
ভার্জিনিয়া সরকার যারা স্ন্যাপ সুবিধা পান, তাদের জন্য খাদ্য সহায়তা ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে। এই কর্মসূচির জন্য প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৩ কোটি ৭৫ লক্ষ ডলার খরচ হবে এবং এটি নভেম্বরের মধ্যে রাজ্যের উদ্বৃত্ত তহবিল থেকে দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
তবে সব রাজ্য ফেডারেল সহায়তা সরবরাহ করতে পারছে না।
অনেক খাদ্য ব্যাংকের পরিচালক সিএনএনকে জানিয়েছেন, খাদ্য ব্যাংকগুলো ফেডারেল সহায়তা কর্মসূচির পরিপূরক হিসেবে কাজ করে, কিন্তু ফেডারেল সহায়তা বন্ধ হয়ে গেলে তাদের পক্ষে একা এত চাহিদা পূরণ করা কঠিন।
উদাহরণস্বরূপ, জর্জিয়ার বাসিন্দারা প্রতি মাসে স্ন্যাপ সুবিধার মাধ্যমে প্রায় ২৫ কোটি ডলারের খাদ্য সহায়তা পান। সেখানে খাদ্য ব্যাংকগুলো প্রতি মাসে মাত্র সাড়ে ৪ মিলিয়ন ডলার মূল্যের খাদ্য বিতরণ করতে পারে।
জর্জিয়া ও সাউথ ক্যারোলাইনার ২৪টি কাউন্টিতে খাদ্য বিতরণ করে ‘গোল্ডেন হারভেস্ট ফুড ব্যাংক’-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অ্যামি ব্রেটম্যান বলেন, “খাদ্য ব্যাংক স্ন্যাপের অধীনে থাকা একটি সুরক্ষা জাল।
এটি ফেডারেল সাহায্যের বিকল্প হতে পারে না।”
ফেডারেল সহায়তা হ্রাস পাওয়ার কারণে খাদ্য ব্যাংকগুলো এরই মধ্যে চাপে রয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসন খাদ্য ব্যাংকগুলোকে স্থানীয় খামার, পশু পালনকারী এবং উৎপাদকদের কাছ থেকে সরাসরি খাদ্য কেনার জন্য দেওয়া তহবিল বাতিল করে দিয়েছে।
ফ্লোরিডার ‘সেকেন্ড হারভেস্ট ফুড ব্যাংক’-এর প্রধান উন্নয়ন কর্মকর্তা গ্রেগ হিগাসন বলেন, গত এক বছরে ফেডারেল খাদ্য সহায়তার পরিমাণ কমেছে। এই খাদ্য ব্যাংকের বিতরণ করা খাদ্যের এক-চতুর্থাংশ আসে ‘জরুরি খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি’ থেকে।
নর্থ ক্যারোলিনার ‘ফুড ব্যাংক অফ সেন্ট্রাল অ্যান্ড ইস্টার্ন’ -এর প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অ্যামি বেরোস বলেন, সরকারি অচলাবস্থা এবং ফেডারেল বাজেট কর্তনের ফলে খাদ্য ব্যাংকগুলোর পরিস্থিতি ‘নজিরবিহীন’ হয়ে উঠেছে।
তাঁর সংস্থা স্থানীয় খাদ্য ক্রয় কর্মসূচি বাতিল হওয়ায় ২০ লক্ষ ডলার হারিয়েছে এবং জরুরি খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি থেকে প্রায় ৮০ ট্রাক খাদ্য সরবরাহ বাতিল করা হয়েছে।
বেরোস বলেন, “খাদ্য ব্যাংকগুলোর পক্ষে এই বিশাল ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব নয়।”
তথ্য সূত্র: সিএনএন