মার্কিন বন্ড বিক্রি: চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধের জেরে বিশ্বজুড়ে অস্থিরতা। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শুল্ক যুদ্ধের তীব্রতা বৃদ্ধির ফলে বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে পরিচিত মার্কিন বন্ড বাজারে বড় ধরনের দরপতন দেখা দিয়েছে।
বিনিয়োগকারীরা এখন মার্কিন অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়ছেন, যার ফলস্বরূপ বন্ডগুলো বিক্রি করে দিচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের ফলন (yield) বা সুদহার দ্রুত বাড়ছে। সাধারণত, বন্ডের দাম কমলে ফলন বাড়ে। সম্প্রতি, ১০ বছর মেয়াদী মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের ফলন বেড়েছে, যা ফেব্রুয়ারীর শেষের পর সর্বোচ্চ।
একইভাবে, ৩০ বছর মেয়াদী বন্ডের ফলনও বেড়েছে, যা গত বছরের শেষের দিক থেকে সর্বোচ্চ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন অস্থিরতা তারা ২০২০ সালের মহামারী এবং ২০০৮ সালের বিশ্ব আর্থিক সংকটের সময় ছাড়া দেখেননি।
যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের কারণে যুক্তরাজ্যের বন্ড বাজারও চাপে পড়েছে। সেখানকার ৩০ বছর মেয়াদী বন্ডের ফলন বেড়েছে, যা কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ।
বন্ডের সুদহার বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারের ঋণ নেওয়ার খরচও বাড়বে, যা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করতে পারে।
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ পরিস্থিতি আরও কঠিন করে তুলেছে। চীন জানিয়েছে, তারা কোনো অবস্থাতেই পিছিয়ে আসবে না।
বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে চীনের পক্ষ থেকে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বন্ড বিক্রি করে দেওয়ার পেছনে চীনের কোনো ভূমিকা আছে কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
এই অস্থিরতার প্রভাব শুধু বন্ড বাজারে সীমাবদ্ধ নেই। বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজারেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
জাপানের নিক্কেই সূচক প্রায় ৪ শতাংশ কমেছে। তাইওয়ানের প্রধান শেয়ার সূচক ৫.৮ শতাংশ এবং হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক ০.৪ শতাংশ কমেছে।
যদিও চীনের শেয়ার বাজার কিছুটা স্থিতিশীল ছিল, তবে ইউরোপের প্রধান বাজারগুলোতেও দরপতন হয়েছে। জার্মানির ড্যাক্স সূচক প্রায় ২.৩ শতাংশ এবং ফ্রান্সের সিএসি ৪০ সূচক ২.৪ শতাংশ কমেছে।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিও ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। বিশ্ব অর্থনীতির এই টালমাটাল পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য, বিশেষ করে আমদানি-রপ্তানি এবং রেমিট্যান্সের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে গেলে আমদানি ব্যয় বাড়বে, যা মূল্যস্ফীতিকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই, সরকারের নীতিনির্ধারকদের এই পরিস্থিতি বিবেচনা করে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখা যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ব অর্থনীতির এই সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। সরকারের উচিত হবে বিশ্ব বাজারের গতিবিধির দিকে গভীর নজর রাখা এবং দেশের অর্থনীতির সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান