যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি অচলাবস্থা: দায়ী কে? দুই দলের কাঁদা ছোড়াছুঁড়ি!

যুক্তরাষ্ট্রের সরকার অচলাবস্থা: ওহাইও’র বাসিন্দাদের ক্ষোভ, উভয় দলের প্রতিই অভিযোগ।

যুক্তরাষ্ট্রে সরকারের কার্যক্রম আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওহাইও অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের অভিযোগ, এই অচলাবস্থার জন্য রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয় দলই দায়ী।

সরকারি কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকে চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছেন, জাতীয় উদ্যান ও জাদুঘরগুলো বন্ধ হয়ে গেছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে স্থানীয় অর্থনীতিতে।

গত ১লা অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই অচলাবস্থার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সরকারি কর্মচারীরা। তাদের অনেকেই হয় বেতন পাচ্ছেন না, নয়তো সাময়িকভাবে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।

ওহাইও’র ডেটনের বাসিন্দা হাওয়ার্ড প্যাটারসন নামের এক ব্যক্তি জানান, তিনি তার পরিবারকে নিয়ে প্রায়ই এখানকার একটি জাতীয় উদ্যানে ঘুরতে যান। কিন্তু সরকারি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেটি এখন জনসাধারণের জন্য বন্ধ রয়েছে।

একই কারণে তিনি স্থানীয় একটি বিমান জাদুঘরেও যেতে পারেননি। হাওয়ার্ড বলেন, “আমি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নই, কিন্তু এর ফল আমাদের ভোগ করতে হচ্ছে।

আমার পরিবার ডেমোক্রেটদের সমর্থক, তবে এই মুহূর্তে আমি তাদেরই দায়ী করছি, কারণ তাদের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে।”

ডেটনের আরেক বাসিন্দা টয়োয়া জ্যাকসন সরাসরি এই অচলাবস্থার জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দায়ী করেন। তার মতে, স্বাস্থ্যখাতে রিপাবলিকানদের ব্যয় সংকোচনের নীতিই এর মূল কারণ।

অন্যদিকে, ওয়াশিংটনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলছে দোষারোপের পালা। রিপাবলিকানরা ডেমোক্র্যাটদের ওপর দায় চাপাচ্ছেন, আর ডেমোক্র্যাটরা এর জন্য রিপাবলিকানদের দায়ী করছেন।

উভয় দলই একে অপরের বিরুদ্ধে আলোচনার টেবিলে বসতে না চাওয়ার অভিযোগ আনছেন।

ডেমোক্র্যাটরা চাচ্ছেন, স্বাস্থ্যবীমা বিষয়ক কিছু কর সুবিধা বাড়ানো হোক এবং ট্রাম্পের আমলে স্বাস্থ্যখাতে যে ব্যয় সংকোচনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা বাতিল করা হোক।

কিন্তু রিপাবলিকানরা বলছেন, তারা অভিবাসন বিষয়ক একটি বিলের ওপর আগে ভোট করতে চান।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই অচলাবস্থার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। সরকারি কাজকর্ম বন্ধ হয়ে গেলে অনেক জরুরি পরিষেবা ব্যাহত হয়, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তোলে।

এছাড়াও, এর ফলে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের কাজও বন্ধ হয়ে যায়, যা দেশের উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করে।

ওহাইও অঙ্গরাজ্যের স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করেন, এই অচলাবস্থা তাদের জীবনকে সরাসরি প্রভাবিত করছে।

ডেটনের একটি বুটিকের ম্যানেজার টিয়েরা ফ্রিম্যান জানান, সরকারি কর্মীদের বেতন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তার ব্যবসার ওপর খারাপ প্রভাব পড়েছে।

তিনি বলেন, “আগে যখন তারা নিয়মিত বেতন পেতেন, তখন দোকানে ক্রেতাদের আনাগোনা বেশি থাকত। এখন তাদের সেই অবস্থা নেই।”

আরেক বাসিন্দা ড্যানিয়েলা মার্টিনেজ মনে করেন, এই অচলাবস্থার জন্য রাজনীতিবিদদের অযোগ্যতা দায়ী।

তিনি বলেন, “ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান উভয় দলই জনগণের কোনো উপকারে আসছে না। ফলে সরকার অচল হয়ে পড়েছে।”

ইউনিভার্সিটি অফ ডেটনের শিক্ষার্থী অ্যাডি টার্নার মনে করেন, এই অচলাবস্থার জন্য উভয় দলই দায়ী।

তিনি বলেন, “কেউ কারো সঙ্গে সমঝোতা করতে রাজি নয়, যা খুবই দুঃখজনক।”

যুক্তরাষ্ট্রের এই রাজনৈতিক অচলাবস্থা কবে কাটবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়।

তবে এর ফলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে, যা উভয় দলের জন্যই উদ্বেগের কারণ।

তথ্য সূত্র: সিএনএন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *