যুক্তরাষ্ট্রের অচলাবস্থা: ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘতম সময় ধরে চলা সরকারি অচলাবস্থা: অর্থনীতির উপর প্রভাব ও বিশ্ব অর্থনীতির জন্য শঙ্কার কারণ।

যুক্তরাষ্ট্রের সরকারে অচলাবস্থা বর্তমানে দেশটির ইতিহাসে দীর্ঘতম সময় ধরে চলছে। বাজেট নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কের জেরে সৃষ্ট এই পরিস্থিতির কারণে দেশটির অর্থনীতিতে দেখা দিয়েছে গুরুতর প্রভাব, যা বিশ্ব অর্থনীতির জন্যও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

১ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই অচলাবস্থা ইতোমধ্যেই প্রায় ৩৬ দিন পার করেছে। এর ফলস্বরূপ, দেশটির অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য – যদিও অস্থায়ী – আঘাত লেগেছে। সরকারি কাজকর্ম ব্যাহত হওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। খাদ্য সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বহু পরিবার, যেখানে খাদ্য নিরাপত্তা এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এছাড়াও, প্রায় ১৪ লক্ষ ফেডারেল কর্মচারী বেতন পাচ্ছেন না, অথচ তাদের অনেকেই নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন। সরকারি তথ্য প্রকাশে বিলম্ব হওয়ায় বিনিয়োগকারী এবং নীতিনির্ধারকেরা দেশের অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে অন্ধকারে রয়েছেন।

গোল্ডম্যান স্যাক্সের প্রধান রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ অ্যালেক ফিলিপস এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, “বর্তমান অচলাবস্থা সম্ভবত আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অর্থনীতির উপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলবে।”

এই অচলাবস্থা অব্যাহত থাকলে অর্থনীতির উপর আরও খারাপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। গোল্ডম্যান স্যাক্সের হিসাব অনুযায়ী, অচলাবস্থা যদি আগামী সপ্তাহের মধ্যে শেষও হয়, তাহলেও চতুর্থ প্রান্তিকে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ১.১৫ শতাংশ কমতে পারে। নিরপেক্ষ সংস্থা কংগ্রেসনাল বাজেট অফিসের (সিবিও) ধারণা, এর ফলে জিডিপি ১ থেকে ২ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে। সিবিও’র মতে, অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত হলে এই ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।

যদিও এই ক্ষতির একটি বড় অংশ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব, তবে সিবিও’র হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৭ থেকে ১৪ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি স্থায়ীভাবে হয়ে যেতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অচলাবস্থার কারণে অর্থনীতির এই মন্দা চললে ২০২৫ সালে এর প্রভাব আরও মারাত্মক হতে পারে। গোল্ডম্যান স্যাক্সের পূর্বাভাস অনুযায়ী, চতুর্থ প্রান্তিকে জিডিপি বৃদ্ধির হার ১ শতাংশে নেমে আসতে পারে। যেখানে তৃতীয় প্রান্তিকে এই হার ৩ থেকে ৪ শতাংশ পর্যন্ত ছিল।

জাপান অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান বৈশ্বিক কৌশলবিদ ডেভিড কেলি বলছেন, “অর্থনীতি এমনিতেই ধীরগতির দিকে যাচ্ছিল, আর এই অচলাবস্থা পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলেছে।” তিনি এর কারণ হিসেবে অতিরিক্ত শুল্ক, অভিবাসন কমে যাওয়া এবং শিক্ষার্থীদের ঋণ পরিশোধের মতো বিষয়গুলোকে চিহ্নিত করেছেন।

আর্থিক তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রেও দেখা দিয়েছে বড় ধরনের সমস্যা। অচলাবস্থার কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সূচক সময়মতো প্রকাশ করা যাচ্ছে না। এর ফলে নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্ত নিতে বেগ পেতে হচ্ছে। এমনকি, ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড) গত সপ্তাহে মাসিক কর্মসংস্থান বিষয়ক প্রতিবেদন ছাড়াই সুদের হার নির্ধারণ করতে বাধ্য হয়েছে।

ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, “কুয়াশার মধ্যে গাড়ি চালালে যেমন গতি কমাতে হয়, তেমনই পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদেরও পদক্ষেপ নিতে হতে পারে।”

তবে আশার কথা হলো, সরকার পুনরায় চালু হওয়ার পর অচলাবস্থার কারণে হওয়া ক্ষতির বেশিরভাগটাই পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গোল্ডম্যান স্যাক্সের ধারণা, প্রথম প্রান্তিকে জিডিপি ১.৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। যদিও ফেডারেল কর্মীদের বেতন পরিশোধের বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়, যা দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতির উপর আরও খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *