মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আবারও দেখা দিয়েছে সরকারি অচলাবস্থা, যা নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ। দেশটির কংগ্রেস নতুন অর্থবছরের জন্য বাজেট অনুমোদন করতে ব্যর্থ হওয়ায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, যার ফলে বিভিন্ন সরকারি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে এবং অনেক ফেডারেল কর্মচারী হয় ছুটিতে গিয়েছেন, নয়তো বেতন ছাড়াই কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
এই অচলাবস্থার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ নাগরিক এবং সরকারি কর্মীরা। জানা গেছে, অনেকেই তাদের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সুবিধা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
জাতীয় উদ্যান, জাদুঘরসহ বিভিন্ন ফেডারেল সাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পর্যটকদের ভ্রমণ পরিকল্পনা ভেস্তে যাচ্ছে। বিশেষ করে যারা ভ্রমণের জন্য অগ্রিম অর্থ পরিশোধ করেছেন, তারা পড়েছেন চরম বিপাকে।
উদাহরণস্বরূপ, লুকাস ওয়াল নামের এক ব্যক্তি ভার্জিনিয়ার সাতটি জাতীয় উদ্যান পরিদর্শনের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু অচলাবস্থার কারণে তার পরিকল্পনা বাতিল করতে হয়েছে।
তিনি জানান, “আমি আমার পরিকল্পনা পরিবর্তন করতে চেষ্টা করছি।” একই ধরনের সমস্যায় পড়েছেন নেদারল্যান্ডসের নাগরিক রয়ল্যান্ড ভ্যান ডার হর্ন।
তিনি ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত স্মিথসোনিয়ান আর্काइভস অফ আমেরিকান আর্ট-এ গবেষণা করার জন্য টিকিট বুক করেছিলেন। কিন্তু অচলাবস্থার কারণে জাদুঘর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তার ভ্রমণ পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে।
এই অচলাবস্থার রাজনৈতিক কারণও রয়েছে। ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান দলের মধ্যে বাজেট নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেওয়ায় কোনো সমঝোতা হয়নি।
ডেমোক্র্যাটরা স্বাস্থ্যখাতে ভর্তুকি অব্যাহত রাখতে চাইছে, যেখানে রিপাবলিকানরা তাদের বিরোধিতা করছেন। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, উভয় দলই একে অপরের উপর দোষ চাপিয়ে যাচ্ছে এবং অচলাবস্থা নিরসনে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
হোয়াইট হাউজের বাজেট প্রধান এরই মধ্যে ফেডারেল কর্মীদের ছাঁটাই করার হুমকি দিয়েছেন। এর ফলে সরকারি কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
ফেডারেল কর্মীরা বলছেন, এমন জরুরি অবস্থায় ছাঁটাইয়ের হুমকি আগে কখনো শোনেননি তারা। অনেক কর্মচারী তাদের চাকরির নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
শ্রমিক ইউনিয়নগুলো কর্মীদের ছাঁটাই বন্ধের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে।
সরকারের এই অচলাবস্থার কারণে মার্কিন অর্থনীতির ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নতুন করে বন্যা বীমা পলিসি ইস্যু করা যাচ্ছে না, যা বাড়ি কেনাবেচায় জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
এছাড়া, বিমানবন্দরগুলোতে নিরাপত্তা কর্মীদের বেতন না হওয়ায় ভ্রমণকারীরাও দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অচলাবস্থা সহজে কাটবে না। ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে, সরকার কবে নাগাদ স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরবে, তা বলা কঠিন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন